বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গোপালগঞ্জে যাত্রা শুরু করল 'বঙ্গমাতা ফটো গ্যালারি'। এতে বঙ্গমাতার অনেক অজানা অধ্যায় স্থান পেয়েছে। এখানে স্থিরচিত্রে তাঁর জীবন, কর্ম, সাহস ও ত্যাগের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রদর্শন করা হচ্ছে তাঁর দুর্লভ সব ছবি। বঙ্গমাতাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠি ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা স্থান পেয়েছে এ গ্যালারিতে।

গোপালগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে এই গ্যালারি সাজানো হয়েছে। 'মহীয়সী বঙ্গমাতার চেতনায় অদম্য বাংলাদেশের প্রেরণা' প্রতিপাদ্যে তাঁর ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এটি চালু করা হলো। গতকাল সোমবার চক্ষু হাসপাতাল চত্বরে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এর উদ্বোধন করেন। এ অনুষ্ঠানে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাহিদ ফেরদৌসী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বক্তব্য দেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের গৃহবধূ নার্গিস সুলতানা বলেন, 'শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গৃহিণী ছিলেন বলেই আমরা জানতাম। তবে এই ফটো গ্যালারি দেখে আমার সে ধারণা বদলে গেছে। তিনি সরাসরি রাজনীতি করেননি, কিন্তু তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ছিল। তাই তিনি বঙ্গবন্ধুকে পেছন থেকে রাজনীতিতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা হতে সহযোগিতা করেছেন। তাঁর এই অসামান্য অবদান আমরা ফটো গ্যালারির ছবি ও তাঁকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠি পড়ে জানতে পেরেছি। এই মহীয়সী নারী আমাদের পথচলার প্রেরণার উৎস।'

গোপালগঞ্জ শহরের শেখ হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন বলে, বঙ্গমাতাকে জানতে তেমন কোনো প্রকাশনা নেই। আমি চক্ষু হাসপাতালের বঙ্গমাতা গ্যালারি থেকে তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। তিনি '৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ ও প্রেরণা দিয়েছেন। গণ-আন্দোলন সংগঠিত করতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। এসব জানতে পেরে এই মহীয়সী নারীর প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আরও বেড়েছে। পাঠ্যপুস্তকে তাঁর এই অসাধারণ অবদান অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।'

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম সৈকত বলেন, বঙ্গমাতা ফটো গ্যালারি থেকে আমরা বঙ্গমাতার অদম্য সাহস, বঙ্গবন্ধুর মামলা পরিচালনা, ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। গ্যালারিতে চমৎকারভাবে বঙ্গমাতার সমৃদ্ধ ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে।'

গ্যালারির উদ্যোক্তা হাসপাতালের পরিচালক ডা. নাহিদ ফেরদৌসী বলেন, বঙ্গমাতা সারাজীবন জাতির পিতাকে আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁর এই অসামান্য অবদান আমরা ফটো গ্যালারির মাধ্যমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এই হাসপাতালে দেশের অন্তত ৩৫টি জেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। তাঁরা এখানে এসে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বঙ্গমাতা ফটো গ্যালারিতে সময় কাটাতে পারবেন। মানুষকে বঙ্গমাতা সম্পর্কে জানান দিতেই আমাদের এই প্রয়াস। এটি সবেমাত্র যাত্রা শুরু করেছে। আমরা এই ফটো গ্যালারিকে আরও আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব।'