চট্টগ্রামে বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করতেন কিশোর মো. হাছান। চুরি করতে গিয়ে একাধিকবার চাকরি হারায় সে। পরে নানার হোটেলে চাকরি দেন তার মা। সেখানেও নিয়মিত মামার পকেট থেকে টাকা চুরি করতো হাছান। এতে অতিষ্ঠ হয়ে কিশোর ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে মারধর করেন মা কুলসুম বেগম। এতে মাথায় আঘাত লেগে প্রাণ যায় ছেলের।

খুনের দায় থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার ঘটনা সাজান মা। লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে সন্দেহ হয় পুলিশের। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মারধর করতে গিয়ে মাথায় আঘাত লেগে ছেলের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেন তিনি। এ ঘটনায় মা কুলসুম বেগম (৩৮) ও মামা ফারুক ইসলামকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হত্যার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কুলসুম। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নিহত মো. হাছান (১৪) নগরীর পাহাড়তলী থানার ওয়ার্লেস কলোনি এলাকার বেলাল হোসেনের ছেলে। মায়ের সঙ্গে নগরীর আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনী এলাকায় থাকতেন হাছান।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে কুলসুম বেগম জানিয়েছেন, হাটহাজারীতে নানার কুলিং কর্নারে চাকরি করতো হাছান। গত রোববার কুলিং কর্নারে তার মামা নুরনবী ইসলাম সোহেলের মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা চুরি করে মায়ের বাসায় চলে আসে সে। সোহেল বিষয়টি তার বোন কুলসুমকে জানান। সোমবার রাতে কুলসুম ক্ষুব্ধ হয়ে ছেলেকে শাসন করতে মারধর করেন। একপর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দেন। এতে ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে লেগে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায় হাছান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লে ভয় পান তিনি। বাসার পাশেই থাকতেন তার আরেক ভাই ফারুক। তাকে ডেকে আনেন। খুনের ঘটনা ধামাচাপ দিতে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচারের পরিকল্পনা নেন তারা। দু'জন মিলে হাছানের মরদেহ বাসার ভেন্টিলেটরের লোহার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। রাত ২টার দিকে বাসার বাইরে এসে তারা কান্না শুরু করেন। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে ওড়না কেটে মরদেহ নিচে নামান তারা। পরে স্থানীয় চিকিৎসককেও ডেকে আনা হয়। তিনি এসে হাছানকে মৃত ঘোষণা করেন।

আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, 'খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করতে যায় পুলিশ। আলামত দেখে সন্দেহ হলে মা কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন তিনি। প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে, মায়ের মারধরে ছেলের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যা বলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করে অপরাধ করেছেন তিনি। এ ঘটনায় ছেলেটির বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ওই মামলায় ছেলেটির মা ও মামাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'