খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়া বাঁধটি মেরামত করা যায়নি। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার নারী-পুরুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। দুপুরে কপোতাক্ষ নদের জোয়ারে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, চরামুখা, হলুদবুনিয়া, মেদেরচর, বীণাপানি ও দক্ষিণ বেদকাশি গ্রামের প্রায় ৬ হাজার বিঘা জমির চিংড়ি ঘের ও এক হাজার বিঘা জমির আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ধসে গেছে। এতে ওইসব গ্রামে যাতায়াতের পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে আসবাব ও ধান-চাল নষ্ট হয়েছে।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুস সালাম খান জানিয়েছেন, দুপুরের জোয়ারের সময় ওইসব গ্রামের বেশিরভাগ নারী-পুরুষ বাঁধ মেরামতের কাজে ব্যস্ত থাকায় তাঁদের ঘরের জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারেননি। বিকেল থেকে এসব গ্রামের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বীণাপানি গ্রামের গীরেন্দ্র নাথ মণ্ডল জানান, তাঁর পরিবারের ৫ সদস্যের মধ্যে তিনজন বাঁধ মেরামতের কাজে এসেছিলেন। বাড়িতে ছোট দুই সন্তান ছিল। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় তাঁরা পাশের একটি পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে বাড়িতে এসে দেখেন, ঘরের চাল-ডাল, আসবাবসহ সব ভেসে গেছে।

একই অবস্থা আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদেরও। অনেকের শেষ সম্বলটুকু জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। এ অবস্থায় ওইসব গ্রামে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত ১৭ জুলাই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর তাঁরা নিজ চেষ্টায় তা মেরামত করেছিলেন। পরে পাউবো কর্মকর্তারা এসে বাঁধ রক্ষার দায়িত্ব নেন। তাঁরা স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে ওই রিং বাঁধ রক্ষার দায়িত্ব দেন। কিন্তু তিনি নিয়মিত শ্রমিক দিয়ে সংস্কার না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, গ্রামবাসীর দেওয়া রিং বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে ব্যাপক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এবার নদীতে জোয়ারের পানির চাপ এত বেশি যে, তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। জোয়ারের চাপ একটু কমলে নতুন রিং বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, প্লাবিত এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।