-(1)-samakal-630dac1bc4a67.jpg)
কাফাইয়াকান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকের জরাজীর্ণ ভবন-সমকাল
২০১১ সাল থেকে সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের কাফাইয়াকান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ওমর ফারুক। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী আসেন সেবা নিতে। তাঁদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয় কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ওমর ফারুককে। অথচ তাঁর সঙ্গে আরও অন্তত দু'জন সহকর্মী থাকার কথা।
এ তো গেল জনবল সংকটের কথা। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, জীর্ণ ভবনে আসা রোগীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় সিএইচসিপি ফারুককে। যে কোনো সময় ধসের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে কাজ করেন তিনি।
ওমর ফারুক বলেন, ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। চিকিৎসাসামগ্রী ও আসবাব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখানে ঠিকমতো ওষুধপত্রও মেলে না। ফলে প্রায়ই রোগীদের পাঠাতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
শনিবার সেখানে এলার্জির সমস্যা নিয়ে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরের সনমান্দি থেকে এসেছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আছিয়া বেগম। তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হলে ১৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়, যে কারণে ক্লিনিকে এসেছেন। তবে অনেক সময় এখানে ওষুধ পান না বলে অভিযোগ করলেন তিনি। ক্লিনিকটিতে আরও আধুনিক চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাঁর।
উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার মানুষের বাস। তাঁদের সেবাদানের জন্য রয়েছে ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক। এগুলোর মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিষয়ে পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা পাওয়ার কথা নাগরিকদের। কিন্তু অযত্ন ও সংস্কারের অভাবে ১৭টি ক্লিনিকের অবস্থাই করুণ। নানা সমস্যায় জর্জরিত ক্লিনিকগুলোই যেন রোগে ভারাক্রান্ত। বেশিরভাগ ক্লিনিকে নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল। এ ছাড়া কিছু ক্লিনিকে ওষুধের সংকট রয়েছে। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। পানি সরবরাহ ছাড়াই চলছে অনেক ক্লিনিক। শৌচাগারগুলোর অবস্থাও বেহাল। অধিকাংশ ভবনের দরজা-জানালা খুলে গেছে। ছাদে ফাটল ধরেছে, খসে পড়েছে পলেস্তারা।
এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিতভাবে তিনজন করে দায়িত্ব পালনের কথা। তবে জামপুর ইউনিয়নের মুন্দিরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের একমাত্র কর্মী সিএইচসিপি হালিমা খাতুন চম্পা। তিনি বলেন, ক্লিনিকটির সামনের জায়গা নিচু। যে কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে। ফলে সেবা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হন।
এক সময় ক্লিনিকগুলোতে দায়িত্ব পালন করতেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো)। বর্তমানে তাঁরা সে দায়িত্বে নেই। ফলে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একজন সিএইচসিপি চিকিৎসাসেবা দেন। তাঁকে সপ্তাহে তিন দিন করে সহায়তা করার কথা স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীর। তবে অর্ধেক স্থানেই সিএইচসিপিকে সব দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
সোনারগাঁ পৌরসভার দরপত আদর্শ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আবু নাইম বলেন, আদর্শ কমিউনিটি ক্লিনিক হলেও ভবনের অবস্থা নাজুক। ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি পড়ে। এখানে সপ্তাহে তিন দিন সেবা দেন তিনি। বাকি তিন দিন নুনেরটেক কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করেন।
ওই ক্লিনিকে শনিবার সেবা নিতে এসেছিলেন বালুয়া দিঘিরপাড় গ্রামের মানছুরা আক্তার (৩৭)। জ্বর, সর্দি ও এলার্জির সমস্যা দেখা দেওয়ায় ক্লিনিকে আসেন তিনি। মানছুরা বলেন, 'ছোটখাটো সমস্যা হলেই এখানে আসি। তবে সপ্তাহে তিন দিনই বন্ধ থাকে। অন্য সমস্যার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটতে হয়।'
পিরোজপুর ইউনিয়নের জৈনপুর ও দুধঘাটা কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে আধভাঙা ভবনে। একই অবস্থা সনমান্দি ইউনিয়নের চরভুলুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকেরও।
এর ভবন একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী। পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, একমাত্র টিউবওয়েলটিও অকেজো।
এমন দশায় কার্যক্রম চলছে সাদিপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও, নানাখী, জামপুর ইউনিয়নের বুরমদী, পৌরসভার বস্তল, সনমান্দি ইউনিয়নের চরভুলুয়া, সনমান্দি,
মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাজিরগাঁ, বৈদেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী, দামোদরদী, পিরোজপুর ইউনিয়নের তাতুয়াকান্দা, দুধঘাটা, পিরোজপুর, জৈনপুর ও শম্ভুপুরা ইউনিয়নের রাম গোবিন্দেরগাঁও ক্লিনিকে।
এর মধ্যে হামছাদী, দামোদরদী ও বুরুমদী কমিউনিটি ক্লিনিকে নেই নিরাপত্তাবেষ্টনীও। সনমান্দি কমিউনিটি ক্লিনিকের বৈদ্যুতিক পাখাগুলো নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে।
উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সংকট কাটাতে সদিচ্ছার প্রয়োজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সংকট নিরসনের চেষ্টা করবেন।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় বলে জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাবরিনা হক। তিনি বলেন, 'চিকিৎসকরা এগুলো পরিচালনা করলেও সংস্কারের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। যে ক্লিনিকগুলোর সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলোর তালিকা তাদের দিয়েছি। এ ছাড়া স্বাস্থ্য প্রকৌশলীর দায়িত্বপ্রাপ্তরাও তালিকা চেয়েছেন। তাঁদেরও দিয়েছি।' চলতি বছরের মধ্যেই ক্লিনিকগুলোর সমস্যা সমাধানের আশা করছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান এ বিষয়ে বলেন, জরাজীর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। এরপর কাজ শুরু হবে।
মন্তব্য করুন