- সারাদেশ
- মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান: দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত
মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান: দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত

রোহিঙ্গা সংকট শুধুমাত্র বাংলাদেশের একার নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে টেকসই প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়েই রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করে দক্ষিণ কোরিয়া। ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাবের 'ডিক্যাব টক' অনুষ্ঠিত হয়। এতে যোগ দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সধারন সম্পাদক একেএম মইনুদ্দিন এবং সঞ্চালনা করেন সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মধ্যেই সংকটের সমাধান জানিয়ে লি জ্যাং কিউন বলেন, বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় দুই দিক থেকে সহযোগিতা করছে দক্ষিণ কোরিয়া। একটি মানবিক সহযোগিতা দেওয়ার মধ্য দিয়ে। আরেকটি হচ্ছে দ্রুত সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামে চাপ প্রয়োগ ও সমর্থনের মধ্য দিয়ে। কোরিয়া বিশ্বাস করে স্বেচ্ছায়, সম্মানের সঙ্গে টেকসই প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের এক মাত্র সমাধান। আর এটি হতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।
দক্ষিণ কোরিয়া ১ শতাংশ সুদে ৩০০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহযোগিতা বা ওডিএ দেবে বলে জানিয়ে লি জ্যাং কিউন বলেন, সহজ শর্তে আগামী ৫ বছরে চুক্তির মাধ্যমে এ অর্থ সহযোগিতা বাংলাদেশকে দেওয়া হবে।দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ যাতে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে সহজে বের হয়ে আসতে পারে এ কারণে বাংলাদেশে সহজ শর্তে ঋণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। শুরুতে বাংলাদেশে ৭০ কোটি ডলার সহযোগিতা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে সেটি পরিবর্তন করে ৩০০ কোটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এক শতাংশ সুদে ৪০ বছরে এ ঋণ পরিশোধের সময় ধরা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও ১৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে চুক্তি করতে দুই দেশ কাজ করছে। এ বছরের মধ্যেই তা হয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি।
এ ঋণের অগ্রাধিকার খাতগুলো নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা বড় প্রকল্পগুলোতে এ সহযোগিতা দিতে চাই। বিশেষ করে অবকাঠামো, তথ্য ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, যোগাযোগ, জ্বালানি এবং পরিবেশের মতো খাতগুলোতে। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনা করতে হবে।
বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলে লি জ্যাং কিউন বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
লি জ্যাং কিউন বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বাণিজ্য রেকর্ড করেছে। ২০২১ সালে দুই দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বাণিজ্য হয়েছে, যা ২০০ কোটির ওপরে। বাংলাদেশে কোরিয়ার রপ্তানি বেড়েছে ৫৮ শতাংশ, যা ১৬৩ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৪০ শতাংশ, যা ৫৫ কোটি ডলারের ওপর।
তিনি আরও বলেন, কোরিয়া বাংলাদেশের অন্যমত বড় বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি। শুধু ২০২১- ২০২২ সালে বাংলাদেশে ১৪০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করা হয়েছে। যা ২০১৯-২০২০ সালে ১১০ কোটি ডলার ছিল। বাংলাদেশে প্রায় ১৫০টি কোরীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করছে।
অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, চলতি বছরে প্রায় ৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মী দক্ষিণ কোরিয়া যাবেন। জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কোরিয়ার গিয়েছেন। কোরিয়ায় প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেন। ২০১৯-২০২০ সালে ২০ কোটি ডলারের ওপর রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। এর পরিমাণ সামনে আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কোরিয়ার তিনটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। আরও দুটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে।
দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান ও ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের কি ধরনের অবস্থান আশা করে জানতে চাইলে লি জ্যাং বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরের বিষয়ে উত্তর দেওয়া আমরা জন্য সহজ নয়। কিন্তু বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশগুলো একে অপরের মধ্যে সহযোগিতা না করে আরও বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতির অবনতিতে আমরা উদ্বিগ্ন। অন্য দেশকে সম্মান দিয়ে সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মন্তব্য করুন