নদী ভাঙনের কবলে পড়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটের ৫নং ফেরি ঘাটটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার বিকেলে কর্তৃপক্ষ ঘাটটি অন্যত্র সরিয়ে নিলেও চরম ঝুকিতে রয়েছে দৌলতদিয়ার সবক’টি ফেরি ঘাটসহ লঞ্চ ঘাট। এছাড়াও ইতোমধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে। এতে করে পদ্মা পাড়ের কয়েকটি গ্রামসহ অনেক ফসলি জমি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তীব্র স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেলে দৌলতদিয়া ৫নং ফেরি ঘাট এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে ফেরি ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়কসহ আশেপাশের কয়েকটি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ৫নং ফেরি ঘাট দিয়ে যানবাহন চলাচল। নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়া ৩, ৪ ও ৬নং ফেরি ঘাটও। যে কোনো সময় ভাঙনের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ সব ঘাটগুলো। এ ছাড়া ঘাটের আশেপাশের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মাঝে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে অন্তত ৫০ বিঘা ফসলী জমি নদী ভাঙনে পদ্মায় বিলিন হয়ে গেছে। ২নং ফেরি ঘাট এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাট সহ ছিদ্দিক কাজীর পাড়া, মজিদ শেখের পাড়া, নতুন পাড়া, ১নং বেপারী পাড়া, দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার, কাউলজনি, আত চেয়ারম্যানের বাজার, বেথুরীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা।

দেবগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর কাউয়ালজনি গ্রামের কৃষক হেলাল শেখ বলেন, ‘এক সাপ্তহে নদী ভাঙনে চলে গেছে প্রায় ২০ বিঘা ফসলি জমি। জমিতে ধান, সবজি সহ বিভিন্ন ফসল ছিল। পদ্মা নদীর ভাঙনে দিশেহারা আমরা। এখন কোথায় যাবো? কি করবো? কার কাছে বললে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে? যেভাবে ফসলী জমি ভাঙছে, বসত বাড়ি আর রক্ষা পাবে না। এভাবে নদী ভাঙন থাকলে আর দু’এক সাপ্তহের মধ্যে কাওয়ালজনি গ্রামটি হারিয়ে যাবে।’

আরেক কৃষক লোকমান সরদার বলেন, ‘এক বছর আগের নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছি। আমার বাবা ও চাচাদের অনেক জমি ছিলো। নদী ভাঙনের ফলে প্রায় সব জমিই নদীতে চলে গেছে। কিছু জমি নদীর পাড় দিয়ে আছে, সেই জমিগুলো কোনো রকম আবাদ করে সংসার চালাই। এক সাপ্তহ ধরে নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এবার আমার দু’বিঘা ফসলী জমি নদীতে চলে গেলো। এ ভাবে যদি নদী ভাঙন অব্যহত থাকে আমার সবটুকু জমি নদীতে চলে যাবে।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের তথ্য মতে, পদ্মা নদীর ভয়াল গ্রাসে গত ২০১৭ সালে ১৯১৫টি, ২০১৮ সালে ২০৭০টি এবং ২০১৯ সালে ৩১২০টি পরিবারের বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকবুল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েকদিন পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। ৫নং ফেরি ঘাটের মিড ওয়াটার অ্যাপ্রোস সড়ক নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ৩, ৪ ও ৬ নম্বর ফেরি ঘাটও নদী ভাঙনের ঝুকিতে রয়েছে। ভাঙন এলাকায় প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হবে।’

রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অংকুর বলেন, ‘পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ নদী শাসনের কাজ করবে। ডাউনে ৭নং ফেরি ঘাট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং আপে আড়াই কিলোমিটার- মোট সাড়ে চার কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শুরু হবে।’