মিয়ানমারকে সতর্ক করার পরও বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টার পড়ছে। ৪ সেপ্টেম্বর সমকালে 'সতর্কতা মানছে না মিয়ানমার, গোলায় সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক' শিরোনামে একটি সংবাদ মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা তথা স্বাধীনতা। বৈরিতা নয়; বন্ধুত্ব আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করে বাংলাদেশ অনন্য নজির স্থাপন করেছে। মিয়ানমার যখন রোহিঙ্গাদের তাদের দেশ থেকে নিপীড়ন করে বিতাড়ন করে, তখন বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কক্সবাজার ও ভাসানচরে এসব রোহিঙ্গা বসবাস করছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা দেশের জন্য গলার কাঁটা হলেও সরকার মানবিক কারণে সেই ঝুঁকি সামাল দিচ্ছে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্কের উদ্যোক্তা রাষ্ট্র বাংলাদেশ। শুরু থেকেই এদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে যত্নবান।
আমরা জানি, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সহিংসতা চলছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্যরাও প্রাণ হারাচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা চলছে। তাদের গোলা ও মর্টার শেল বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে এসে পড়ছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রথম দফায় মর্টার শেল পড়ার পর বাংলাদেশ সরকার প্রতিবাদ জানিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত সে দেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে সতর্ক করেছে। তারপরও থেমে নেই আতঙ্ক। কারণ, মর্টার শেল পড়ার পর গোলা এসেছে। সতর্ক করার ৭ দিনের মধ্যে আবারও এমন ঘটনা ঘটায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি মিয়ানমার বাংলাদেশের সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না? বাংলাদেশ বৈরিতা নয়; বন্ধুত্বের পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করলেও নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে না। মাথায় রাখতে হবে কোনো পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। মিয়ানমার মর্টার শেল নিক্ষেপ করে উস্কানি দিচ্ছে কিনা, সেটিও মাথায় রাখতে হবে। আমরা কোনো উস্কানিতে না পড়ে নিজেদের অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতে হবে। মিয়ানমার সীমান্তের পাশাপাশি ভারত সীমান্তেও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সীমান্ত হত্যা বন্ধে একমত পোষণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর চলাকালে দিনাজপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাবাহিনী-বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছে। আমরা মাদক ও চোরাকারবারি বা অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের পক্ষে নই। তবে হত্যা না করে গ্রেপ্তার করে সমাধান পাওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।
রুহিয়া, ঠাকুরগাঁও

বিষয় : সীমান্তে আতঙ্ক দূর হোক

মন্তব্য করুন