শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) দুই উন্নয়ন প্রকল্প চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। অধিকতর উন্নয়নের জন্য দুই ধাপে 'অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প-১' এবং 'প্রকল্প-২' এর অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ে এখন চলছে প্রথম প্রকল্পের কাজ। তবে ২য় প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত অবকাঠামোর কাজ কিছুই দৃশ্যমান হয়নি। এর মাঝে চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা। এ দুই প্রকল্পে চারটি হল নির্মাণ না হওয়ায় আবাসন সংকটে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের বাইরে মেস ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। আবাসন সমস্যায় রয়েছেন শিক্ষকরাও। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় কিছুই করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।

১৯৮৬ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সালে। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও অবকাঠামোর দিক দিয়ে সংকট শব্দটা যেন এর সঙ্গী হয়ে আছে। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে একনেকে ২০০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প-১ এর অনুমোদন পায়।
এ প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ছিল সাড়ে তিন বছর। ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত। পরে মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় আরও আড়াই বছর সময় বর্ধিত করা হয়। তবে এর মাঝে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বর্ধিত করা হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানান। ফলে প্রথম প্রকল্প শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে।

এদিকে, ২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেকে ৯৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর অনুমোদন পায়। ২য় প্রকল্পের মেয়াদ ছিল সাড়ে তিন বছর; ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত। এটিরও মেয়াদ শেষ। তবে প্রশাসন এ প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত করেছে। এখন তিন বছর সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে কর্তৃপক্ষ।

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ছিল ১০ তলাবিশিষ্ট ১টি ছাত্রী এবং ১টি ছাত্র হল, গ্র্যাজুয়েট ও বিদেশি ছাত্রদের জন্য ৭ তলাবিশিষ্ট ১টি হোস্টেল, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ১১ তলাবিশিষ্ট ৪টি আবাসিক ভবন, কর্মচারীদের জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট ১টি আবাসিক ভবন, ১০ তলাবিশিষ্ট ১টি প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন অনুষদের বিভাগের জন্য ১০ তলাবিশিষ্ট ৪টি একাডেমিক ভবন, গবেষণার জন্য ১টি কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপ, শাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য ৬ তলাবিশিষ্ট ১টি ভবন, ১০ তলাবিশিষ্ট ১টি ক্লাব কমপ্লেক্স ভবন, ৪ তলাবিশিষ্ট ১টি মসজিদ, কেন্দ্রীয় গ্যারেজ বর্ধিতকরণ, প্রধান সড়কের উভয় পাশের ১৫ মিটার স্প্যানের দুটি ব্রিজ এবং বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন নির্মাণ করার কথা। এদিকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের গত জুন পর্যন্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১ শতাংশ কাজও বাস্তবায়ন হয়নি।

এ প্রকল্পের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ হাবিবুর রহমান বলেন, 'করোনার কারণে দীর্ঘ সময় কোনো কিছু করা সম্ভব হয়নি। এখন আমাদের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তিন বছর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছি। এদিকে মাঠ পর্যায়ের মাটি পরীক্ষা শেষ। এখন ল্যাব-টেস্ট চলছে। এ ছাড়াও বিল্ডিংয়ের ড্রয়িং-ডিজাইন এবং প্রাক্কলন কাজ চললে অচিরেই আমরা দর-বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করব।

অন্যদিকে, শাবির ২শ কোটি ৩৮ লাখ টাকার প্রকল্প-১ বাস্তবায়ন কাজ বর্ধিত সময়ে চলছে। এ প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় সৈয়দ মুজতবা আলী হল বর্ধিতকরণ ও সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়াও ৪ তলাবিশিষ্ট সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের ২য় ব্লক, ৪ তলাবিশিষ্ট একটি ছাত্রী হল, ৫ তলাবিশিষ্ট সেন্টার অব এক্সিলেন্স ভবন শেষ পর্যায়ে আছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ৪ তলা থেকে ১০ তলায় বর্ধিতকরণ, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ৪ তলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবন, সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওয়ার্কশপ নির্মাণ এবং পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনার কাজ চলছে। অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প-১ এর পরিচালক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক একেএম ফেরদৌস বলেন, আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। আমাদের দুটা প্রকল্প শেষ হলে আর কোনো সংকট থাকবে না।

প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের যা বরাদ্দ আছে আমরা সেটা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করব। অবকাঠামো নির্মাণের জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, এতে পরবর্তী সময়ে বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে আমরা সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করব।