
খরস্রোতা শোলমারী নদী এখন ৫-৬ ফুট নালায় পরিণত। গত শনিবারের ছবি সমকাল
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে শোলমারি নদী। নদীটির স্রোত ও গভীরতা নিয়ে নানা গল্প প্রচলিত আছে শোলমারি গ্রামের মানুষের মাঝে। নদী দিয়ে চলাচল করা লঞ্চের রোমাঞ্চকর স্মৃতি এখনও হাতড়ে বেড়ায় মানুষ। এর সবই এখন অতীত।
খরস্রোতা নদীটি প্রাণ হারিয়েছে আরও আগে। দুই বছর ধরে চলছে মুমূর্ষু অবস্থা। এক সময়কার ১৫০ মিটার প্রশস্ত নদী এখন পরিণত হয়েছে ৩-৪ মিটার সরু নালায়। ভাটায় সেখানে নৌকা চালানো যায় না। হেঁটেই পার হয় মানুষ।
নদীটি বাঁচাতে আগে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নদী দখল করে গড়ে ওঠা ইটভাটাসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনাও হয়েছে। এরপর থমকে গেছে সব আয়োজন।
নদীর মৃত্যু দেখে কাঁদছে এলাকার মানুষ। সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন নদীটি বাঁচানো না গেলে ভবিষ্যতে আরও খারাপ দিন আসবে। কারণ ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া, গুটুদিয়া পঞ্চু এবং বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের পানি শোলমারি নদী দিয়েই নিস্কাশন হয়। নদী না থাকলে ভবিষ্যতে ওই এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, চলতি বছর অনাবৃষ্টির মধ্যে একমাত্র বটিয়াঘাটা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর অন্যতম কারণ শোলমারি নদী এবং ভেতরের খালগুলো।
পাউবোর নথিতে শোলমারি নদীর দৈর্ঘ্য দেওয়া আছে ২৯ কিলোমিটার। প্রস্থ ১৫০ মিটার, গড় গভীরতা ১২ দশমিক ৭৫ মিটার। বটিয়াঘাটা উপজেলার কাজীবাছা নদী থেকে শোলমারি নদীর উৎপত্তি। বিল ডাকাতিয়ার পূর্ব প্রান্ত থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া ও পঞ্চুর মধ্য দিয়ে এটি সালতা নদীর সঙ্গে মিশেছে। এরপর আবার জলমার কাছে কাজীবাছা নদীতে মিলিত হয়েছে।
শনিবার শোলমারি খেয়াঘাট এলাকায় দেখা গেছে, বিশাল নদীটি সরু নালার মতো প্রবাহিত হয়ে কোনো রকমে টিকে আছে। নদীর দুই পাশে জেগেছে বিশাল চর। সেখানে চলছে দখলের উৎসব। নদী দখল করে তৈরি করা ইটভাটাগুলো আগের মতোই রয়েছে। ওপারে নতুন আরেকটি ভাটা তৈরি হয়েছে।
কৃষক আবদুল জব্বার সানা জানান, ১০-১২ বছর আগেও নদীতে বড় নৌকা ও লঞ্চ চলত। স্রোতের কারণে মালবাহী নৌকা ঠিকমতো চলত না। তখন কৃষকদের দিয়ে গুণ টানানো হতো। বর্তমান ঘাটও নদীর ভেতরে। এখানেও ৬০-৭০ হাত পানি ছিল।
তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেখা গেল, ওপার থেকে মাথায় ঝুড়ি নিয়ে নদীর দিকে হেঁটে আসছেন এক যুবক। দিব্যি হেঁটেই নদী পার হলেন। এগিয়ে যেতে নিজের পরিচয় দিলেন। তাঁর নাম পূর্ণানন্দ। তিনি জানালেন, আগে প্রতিদিন সকালে নৌকায় করে নদী পার হতেন। দুই বছর ধরে ভাটার সময় নৌকা চলে না।
নদীর তীরে পাউবোর বেড়িবাঁধ ধরে (পোল্ডার ২৮/২) ভ্যানে যেতে পুরোটা পথেই নদীর হতশ্রী দশা দেখা গেল। উত্তর শোলমারি দক্ষিণপাড়া এলাকায় নদীর চর দখল করে বালু ভরতে দেখা গেল। হোগলবুনিয়া খেয়াঘাটে দেখা গেল কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নদী ঘিরতে।
উত্তর শোলমারি গ্রামের মতিয়ার রহমান বলেন, নদীটি না বাঁচালে এই এলাকায় মানুষ থাকতে পারবে না। নদীর রামদিয়া স্লুইসগেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ৯টি গেটের আটটিই বন্ধ হয়ে গেছে। খুলনা বিভাগ-১ এর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নতুন যোগ দিয়েছেন। আগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম দায়িত্ব পালন করছেন বিভাগ-২ এ। তিনি বলেন, নদীটি খননের বিষয়টি বিবেচনায় আছে।
মন্তব্য করুন