- সারাদেশ
- জেলের জালে প্রায় ৩৩ কেজি ওজনের সোনালী হাইতি ভোল মাছ
জেলের জালে প্রায় ৩৩ কেজি ওজনের সোনালী হাইতি ভোল মাছ

ভোল মাছটি বিক্রির জন্য বাজারে তোলা হয়েছে। ছবি-সমকাল
পিরোজপুরের পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরে হইচই পড়ে গেছে একটি মাছ নিয়ে। মাছটি বঙ্গোপসাগরে জালে ধরা পড়ার পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরে নিয়ে আসেন বাদল নামে এক মাঝি।
বন্দরের আড়তে এসে বাদল জানতে পারেন তার জালে ধরা পড়া মাছটি বিরল প্রজাতির সোনালী হাইতি ভোল মাছ। মাছটির ওজন ৩২ কেজি ৭০০ গ্রাম। এর দাম হতে পারে ২৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। মাছের দাম জানতে পেরে খুশিতে আত্মহারা দরিদ্র জেলে বাদল।
এই প্রজাতির মাছ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোল মাছ হলো এক প্রকার ওষুধি মাছ। এই মাছ একদিকে যেমন ওষুধ হিসেবে কাজ করে তেমনি খেতেও খুব সুস্বাদু। ভোল মাছের পুরো শরীরই ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ভোল মাছের পটকা থেকে কিডনি রোগ নিরাময়ের ওষুধ তৈরি করা হয়। এই ওষুধ দিয়ে কিডনির কার্যকারিতা বজায় রাখা হয়। কিডনির পাথর নিরসনে ব্যবহৃত হয় ভোল মাছের পটকায় থাকা রস। ভোল মাছের হৃদপিণ্ড মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভোল মাছের হৃদপিণ্ডে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্টসহ নানাবিধ পুষ্টি উপাদান। এটি রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিবেচিত। তাই এ মাছের হৃদপিণ্ডকে সোনার হৃদয়ও বলা হয়। ভোল মাছের শরীর নানা পুষ্টি উপাদান ও খনিজ পদার্থে ভরপুর। এই মাছের শরীর থেকেই এমন বিশেষ ধরনের সুতো তৈরি হয় যা দিয়ে মানবদেহে সেলাই করলে ঘা শুকানোর পর সুতো শরীরের সঙ্গে মিশে যায়। এই ভোল মাছ থেকে দামি মদ তৈরি করা হয়। সর্বোপরি ওষুধ তৈরিতেই এই মাছ সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বিশ্বের নামী দামি ওষুধ কোম্পানির কাছে এই মাছের রয়েছে বিশেষ চাহিদা।
সোনালী হাইতি ভোল মাছ ধরা পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্দরে ভিড় জমায় জেলে ও স্থানীয়রা।
মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি বাদল হোসেন জানান, কয়েকদিন ধরে গভীর সাগরে মাছ ধরছিলেন তিনি। আড়তে ফেরার দু'দিন আগে সোনালী হাইতি ভোল মাছটি ইলিশের জালে ধরা পড়ে। আড়তে ফিরে ফিরে ওজন করে দেখেন ৩২ কেজি ৭০০ গ্রাম। পরে মাছটিতে বরফ দিলে সেটি সোনালী আকার ধারণ করে। তখন তিনি বুঝতে পারেন এ মাছটি সোনালী হাইতি ভোল মাছ।
জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে মাছটির দরদাম হলেও মাত্র কয়েক লাখ টাকা দাম উঠেছে। বিক্রেতাদের দাবি মাছটির দাম আরও বেশি হবে কারণ এটি একটি বিরল প্রজাতির মাছ। তবে স্থানীয়রা বলছেন মাছটি যদি সোনালী হাইতি ভোল মাছ হয় তবে তার দাম ১৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, সোনালী হাইতি ভোল মাছটি অনেক মূল্যবান। দুষ্প্রাপ্য এ মাছটি সরাসরি ডাক তুলে বিক্রি করতে চাই এবং মাছটির ন্যায্য মূল্য পেতে চাই।
দক্ষিণ উপকূলীয় মৎস্য কল্যাণ সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, মাছটি বিরল প্রজাতির। আমি চট্টগ্রামে জেলে ও আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম মাছটি যদি সোনালী হাইতি ভোল মাছ হয়ে থাকে তবে তার দাম ১৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
পাড়েরহাট মৎস্যজীবী আড়ৎদার সমিতির সম্পাদক মো. মোস্তফা আকন জানান, পাড়েরহাট বন্দরের মাছটি বিক্রি না হওয়ায় সেটি আজ সকালে মহিপুর নিয়ে গেছেন জেলে বাদল। সেখানে মাছিটি বিক্রি হয়েছে কি না তা বলতে পারব না।
মন্তব্য করুন