যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিষ প্রয়োগে ১৮টি কুকুর হত্যার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত বুধবার কুকুরগুলো হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের পেছনে মাটিচাপা দেওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর দায় নেয়নি।

ক্যাম্পাসে বিষ প্রয়োগে কুকুর হত্যার কাজ পাওয়া জাকির মিয়া জানান, দুই হাজার টাকার চুক্তিতে তাঁকে চুয়াডাঙ্গা থেকে ক্যাম্পাসে আনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুন্সি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নির্দেশে তিনি কুকুর নিধন করেছেন।

তবে নিরাপত্তা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের দাবি, তিনি কুকুর মারতে নির্দেশ দেননি। কে বা কারা মেরেছে, তাদের তিনি চেনেনও না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এর দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রক্টর হাসান মোহাম্মদ আল ইমরান জানান, ওই সময় তিনি ছুটিতে ছিলেন। পূজার ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার পর তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। তিনি বলেন, এক সময় ক্যাম্পাসে শিশুদের দেখলে কুকুরের দল তাড়া করত, তখন কুকুরগুলো বাইরে দিয়ে আসা হয়। একবার এক আনসার সদস্যকে কামড়ালে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কুকুর নিধন নিষিদ্ধ হওয়ায় তখনও কোনোটিকে মারা হয়নি। তাঁর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কমিটি এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চিঠি দিলেও তারা টিকা দেয়নি। কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।

যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন জানান, ক্যাম্পাসে কুকুর নিধনের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

প্রাণিকল্যাণ বিল-২০১৯ অনুযায়ী, মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কোনো প্রাণীকে হত্যা করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের জেল হবে। পাশাপাশি কুকুরকে চলাফেরার সুযোগ না দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বেঁধে রাখলেও তা নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য করে একই শাস্তি হবে।

এদিকে, ক্যাম্পাসে কুকুর হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। যবিপ্রবির আইপিই বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর মাসনুন বলেন, ক্যাম্পাসে কুকুর নিধনের নামে ১৮টি কুকুর হত্যার অধিকার কে দিল? একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নির্মমতার দায় কার? ক্যাম্পাসে সমাধান না হওয়া এতশ সমস্যা বাদ দিয়ে কুকুরের পেছনে কেন? একাধিক শিক্ষার্থী একই ধরনের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

পিপল ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাকিবুল হক এমিল গণমাধ্যমকে জানান, একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত একজন এসে ন্যক্কারজনক ও বেআইনিভাবে গণহারে কুকুর নিধন করল, অথচ কর্তৃপক্ষ চুপ, দায় এড়াচ্ছে- এটা হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধের সঙ্গেও এটা সাংঘর্ষিক। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।