যশোরের মনিরামপুরে সাবেক স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ের কথা বলে ডেকে এনে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মশ্বিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইসলাম গাজীর বিরুদ্ধে। বুধবার গভীর রাতে যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকা থেকে ইউপি সদস্য ইসলাম গাজীকে আটক করেছে র‌্যাব।

এর আগে বুধবার রাতে পুলিশ পৌর শহরের কসাইখানার পাশে কলার ক্ষেত থেকে হীরা বেগমের (৩০) ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আকতার আলী মোল্যা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মনিরামপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, নড়াইল সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের আকতার আলী মোল্যার মেয়ে হীরা বেগমের প্রথমে যশোরের মনিরামপুরের মশ্বিমনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। ওই সংসারে হীরা বেগমের দুই ছেলে রয়েছে।

মশ্বিমনগর ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, গত বছর হীরা বেগম ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইসলাম আলী গাজীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ইসলাম হীরাকে নিয়ে মনিরামপুর পৌরশহরের দোলখোলা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কিন্ত পারিবারিক কলহে গত মাসে তাদের সংসার ভেঙে যায়। ইসলাম গাজী হীরাকে তালাক দেন। ফলে হীরা প্রথম সংসারের বড় ছেলেকে নিয়ে নড়াইলে বাবার বাড়ি চলে যান।

নিহতের বাবা আকতার মোল্যা জানান, ইসলাম গাজীর পুনরায় বিয়ের প্রলোভনে নড়াইল থেকে গত সোমবার হীরা বেগম প্রথমপক্ষের ৯ বছর বয়সী বড় ছেলেকে নিয়ে মনিরামপুরের বাসায় আসে। সোমবার রাতেই হীরা ও তার কথিত স্বামী ইসলাম গাজী ছেলেকে অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যাচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে ইসলাম ও হীরা ওই রাতেই ছেলেকে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পালিয়ে যায়। হীরার ছেলে বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মনিরামপুর থানার পরিদর্শক গাজী মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বুধবার রাত ৮টার দিকে ইসলাম গাজী হীরাকে মোটরসাইকেলে নিয়ে নড়াইলের উদ্দেশে বের হন। পথে পৌর শহরের জয়নগর কসাইখানার পাশে কলা ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে হীরাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মুখ, বুকসহ বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করেন এবং পরে  লাশ ফেলে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে রাতেই সহকারী পুলিশ সুপার আশেক সুজা মামুন, র‌্যাব-৬-এর যশোর ক্যাম্পের সদস্যেরা এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ লাশের পাশ থেকে এক জোড়া জুতা ও খাবারভর্তি একটি টিফিনবক্স উদ্ধার করে। ভোররাত ৪টার দিকে যশোর শহরেরর বেজপাড়া এলাকা থেকে র‌্যাব ইসলাম গাজীকে গ্রেপ্তার কর হয়।’

র‌্যাব-৬-এর যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার নাজিউর রহমান জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে ইউপি সদস্য ইসলাম গাজী হীরা বেগমকে হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়, পারিবারিক কলহে সে হীরাকে হত্যা করেছে।