মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল কর্মী শহীদুল ইসলাম শাওন নিহতের ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় হত্যার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর আমলি আদালতে দাখিল করা অভিযোগে ৯ পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ ও আওয়ামী লীগের অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নির্বাহী সদস্য এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে এ অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ গ্রহণ করে ১০ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার।

শাওন হত্যায় দাখিল করা অভিযোগে পুলিশের ৯ সদস্য হচ্ছেন- মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ-উল-ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অর্থ) সুমন দেব, মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান, সদর থানা উপপরিদর্শক মো. ফরিদ উদ্দিন, মো. আরিফুর রহমান, সুকান্ত বাউল, সহকারী উপপরিদর্শক নকুল চন্দ্র ধর, অজিত চন্দ্র বিশ্বাস ও মন্টু বৈদ্য। এ ছাড়া আরও ৪০ থেকে ৫০ পুলিশ সদস্য ও অজ্ঞাতপরিচয় সাদা পোশাকের অস্ত্রধারী সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর পুরোনো ফেরিঘাটের কোল্ডস্টোরেজের সামনে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল। সমাবেশে অংশ নিতে দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে অতি উৎসাহী হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ-উল-ইসলাম মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের হাত থেকে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার ছিনিয়ে নেন। পরে তিনি মারমুখী হয়ে ওঠেন এবং তাঁর নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেটসহ সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। এ সময় পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে নাম উল্লেখ করা ৯ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় ৪০ থেকে ৫০ পুলিশ সদস্য এবং তাদের সঙ্গে ২০০ থেকে ৩০০ সরকারদলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন তখন ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁর কপালের ডান দিকে গুলি করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান শাওন।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান আল-মামুন বলেন, শাওনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের অপর আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশের গুলিতে শহীদুল ইসলাম শাওনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আমরা আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছি। আদালত জানিয়েছেন, পরে এ বিষয়ে আদেশ দেবেন।

মামলার বাদী মো. সালাহউদ্দিন খান বলেন, যুবদল কর্মী শাওন নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার হত্যার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ সদর আমলি আদালতে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এখন আমরা আদালতের আদেশের অপেক্ষায়।

ঘটনার ১৫ দিনেও শাওনের পরিবার থেকে মামলা করা হয়নি কেন- জানতে চাইলে মামলার বাদী বলেন, নিহত শাওনের পরিবারের সদস্যরা ভয় ও আতঙ্কে রয়েছেন। এ জন্য তাঁরা মামলা করেননি। তবে পরবর্তী সময় তাঁরা এ মামলার সঙ্গে যুক্ত হবেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশে মামলার বাদী হয়েছেন বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।

মামলার বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বিএনপির লোকজন আদালতে যে মামলার আবেদন করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাঁরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আদালতে এমন একটি অভিযোগ করেছেন। শাওন হত্যার ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় জিডির পর ইতোমধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে এ ঘটনার তদন্ত চলছে।

গত ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সদর থানার এসআই মাঈনউদ্দিন ও শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মালেক বাদী হয়ে বিএনপির দেড় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেন।