ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ভাষণের ছবিতে মোড়ানো বগির বাইরের অংশ, যা দেখে ভেতরে দেখার সাধ জাগে। ভেতরে ঢুকলে মিলবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেড়ে ওঠা ও কর্মময় জীবনের আদ্যোপান্ত। এক বগিতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বড় অংশ সম্পর্কে জ্ঞান পেতে তাই সেখানে তিলধারণের ঠাঁই নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে দেখা যায় এমন দৃশ্য।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে এখন এটি ময়মনসিংহে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। সকালে ময়মনসিংহ জংশনে এসে পৌঁছায় ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত জংশনের প্রথম গেটের পাশে অবস্থান করবে এটি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জাদুঘর উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য।

বৃহস্পতিবার শুরুর দিন সকালে দর্শনার্থী কম থাকলেও বিকেলে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না এ জাদুঘরে। ময়মনসিংহ জংশনে গিয়ে দেখা যায়, জাদুঘরটি ঘিরে মানুষের উৎসাহ। বাইরের অংশে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের সঙ্গে নিজেদের ছবি ও সেলফি নিচ্ছেন অনেকে। সার ধরে ভেতরে দর্শনার্থী প্রবেশ করাচ্ছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবির) সদস্য এবং বগির দায়িত্বপ্রাপ্তকর্মীরা। নিরাপত্তার জন্য সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশও মোতায়েন ছিল।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের অজানা তথ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দৃষ্টিনন্দন এ জাদুঘর সাজানো হয়েছে। জাতির পিতার বেড়ে ওঠা ও কর্মময় জীবনের ধারাবাহিক নানা ছবি, ব্যবহার্য জিনিস, ঐতিহাসিক স্থাপনা, বঙ্গবন্ধুর লেখা চিঠি, বই, ৭ মার্চের ভাষণ সবই ঠাঁই পেয়েছে এক বগিতে। ১৯২০ থেকে ১৯৪২ সাল, ১৯৪৩ থেকে ১৯৫২ সাল, ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল, ১৯৫৫ থেকে ১৯৬০ সাল, ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল, ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল, ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭০ সাল, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল এবং ১৯৭১ সালে প্রস্থানের চিত্র তুলে আনা হয়েছে।

বগিতে ঢুকেই দর্শনার্থীরা পরিচিত হবেন বঙ্গবন্ধুর শৈশবের সঙ্গে। এরপর পর্যায়ক্রমে তাঁর ছাত্রজীবন, বেড়ে ওঠা, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠা, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তাঁর অবদান, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগের করুণ চিত্রের দেখা মিলবে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয়দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কেও জানা যাবে। এখানে প্রদর্শন করা প্রতিটি কনটেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে ভিডিও এবং স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে। ১২টি পর্বের মধ্যে একটিতে ভাষণ, একটিতে বই ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক চিঠি স্থান পেয়েছে। জাদুঘরে রয়েছে কৃত্রিম ফুলের বাগানও। দৃষ্টিনন্দন বগির ভেতর পৃথক টেবিলে স্থান হয়েছে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক নিবাসের রেপ্লিকা, ব্যবহূত চশমা, পাইপ, মুজিবকোট, টুঙ্গিপাড়ার সমাধিস্থলের রেপ্লিকাসহ ১৩টি নিদর্শন।

বঙ্গবন্ধুর জীবন সম্পর্কে জানতে মা-বাবার সঙ্গে অনেক শিশুকেই দেখা যায় এখানে। প্রথম শ্রেণির মারিয়মের উৎসাহের সীমা ছিল না জাদুঘরে প্রবেশ করে। পুরো জাদুঘর ঘুরে ঘুরে তুলেছে সেলফি। ষষ্ঠ শ্রেণির আরাফাত খাঁ ও পঞ্চম শ্রেণির রিয়াদ হোসেন জানায়, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এত সুন্দর আয়োজন তারা প্রথম দেখছে। অনেক কিছু জানতে পেরেছে।

শরীফ আহমেদ বিপুল দুই ভাতিজা সাহি ও সারাফকে নিয়ে জাদুঘরে এসেছিলেন। তিনি জানান, জাদুঘরে শিশুদের অনেক কিছু জানার সুযোগ করে দিয়েছে। এ ধরনের আয়োজন ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে অনন্য ভূমিকা রাখবে। তারাকান্দা উপজেলার বিসকা গ্রামের হালিম খাতুন শহরে কাজ শেষে এসেছিলেন জাদুঘর দেখতে। তিনি বলেন, মুগ্ধ হওয়ার মতো আয়োজন। এক বগিতে জাতির পিতাকে জানার এ সুযোগ কেউ যেন হাতছাড়া না করে।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশনের সুপারিনটেন্ডেন্ট জাহাঙ্গীর আকন্দ জানান, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ আয়োজনের মাধ্যমে তাঁর সংগ্রামী জীবন, জাতির জন্য আত্মত্যাগ ও অবদান সম্পর্কে সবাই জানতে পারবে। নতুন প্রজন্ম অনেক বেশি উপকৃত হবে।