চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারসহ সাত জনকে আসামি করে দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবদুল হালিমের আদালতে শুনানি শেষে চার্জশিট গ্রহণ করেন। বাবুলকে কারাগারে ডিভিশন মর্যাদা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে আদালত।

বাবুল আক্তারের পক্ষে দাখিল করা তিনটি আবেদনের মধ্যে আছে জেলকোডের ৯১০ ধারা অনুযায়ী বাবুল আক্তারকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়া, আইনজীবীর সঙ্গে একান্তে কথা বলার জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রদান এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে নিষ্পত্তি করা বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার তদন্তের কোনো সাক্ষ্য চলতি মামলার নথির সঙ্গে সংযুক্ত না করা।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আসামিপক্ষে নারাজি এবং পুনঃতদন্তের আবেদন করা হলেও শুনানি শেষে তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। চার্জশিট গ্রহণ করা হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেল্টম্বর এ মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।’

বাবুলের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, ‘দ্বিতীয় মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রথম মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না, এ মর্মে উচ্চ আদালতের একাধিক আদেশ রয়েছে। সেগুলো আমরা দাখিল করেছি। আদালত শুনানি করেছেন। আদেশ অপেক্ষমান রেখেছেন। চার্জশিট গ্রহণ করেছেন। বাবুলকে ডিভিশন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। বাবুলের সাথে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনারের কক্ষে এক ঘণ্টা একান্তে কথা বলার অনুমতি দেন আদালত।’

মামলায় আসামিরা হলেন- সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু। এদের মধ্যে মুছা ও কালু পলাতক।

চার্জশিটে পিবিআই উল্লেখ করেছে, পরকীয়ার ঘটনা জেনে যাওয়ায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তার সোর্সকে দিয়ে স্ত্রী মিতুকে খুন করিয়েছিলেন। বাবুল মিতু দম্পতির বড় ছেলে মায়ের হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী।

ছেলের সামনে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের জিইসি মোড়ে মিতুকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় মিতু ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন। এসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল আক্তার। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে যুক্ত থাকায় তাঁর স্ত্রী খুন হয়ে থাকতে পারেন। অবশ্য তিন সপ্তাহের কম সময়ে মামলার মোড় ঘুরে যায়। মিতু হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খোদ বাবুলের সম্পৃক্ততার তথ্য পায় পিবিআই। এরপর বাবুলসহ ৯ জনকে আসামি করে নতুন হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ। ছেলে-মেয়েরা এখন মাগুরায় দাদা আবদুল ওয়াদুদ মিয়া ও চাচা হাবিবুর রহমানের কাছে আছে।