খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সুন্দরবন নিয়ে নানামুখী গবেষণা হচ্ছে। নানা উদ্যোগ ও প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে এবং তথ্য-তত্ত্ব আহরণ করা হচ্ছে। তবে তা বিচ্ছিন্নভাবে হওয়ায় লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গবেষণার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সম্মেলন কক্ষে সুন্দরবনের ওপর এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচার রিসার্চ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সুন্দরবন বন বিভাগ, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য বিভাগ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, জিআইজেডসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সেমিনারে অংশ নেন। তাঁরা সুন্দরবন নিয়ে নিজেদের গবেষণা, উদ্যোগ ও পরিকল্পনা এবং তথ্য-তত্ত্ব তুলে ধরেন। সুন্দরবন নিয়ে চলমান প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থার ওপর আলোচনা করা হয়।

খুবি উপাচার্য বলেন, ইকোলজিক্যাল মডেলিং ও ডাটা অ্যানালাইজিং করে ইকোসিস্টেম নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা করা যায়। তিনি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের প্রতিনিধিদের প্রতি বিশ্ব সম্পদ সুন্দরবনের টেকসই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গবেষণার ক্ষেত্রে সহযোগিতা কামনা করেন।

সেমিনারে উপস্থাপিত বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধ ও আলোচনায় উঠে আসে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানামুখী বৈরী অভিঘাত সত্ত্বেও সুন্দরবন আপন মহিমায় টিকে আছে। এর আয়তনও বাড়ছে। গত ৫০-৬০ বছরে সুন্দরবনের অনেক পরিবর্তনও দৃশ্যমান। গেওয়া, গরানসহ বৃক্ষ এবং লতাগুল্ম বৃদ্ধির প্রবণতা আশাব্যাঞ্জক অবস্থায় রয়েছে। আবার সুন্দরীসহ কিছু প্রজাতির গাছ কমে যাচ্ছে।

সেমিনারে বলা হয়, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ নির্বিচারে নদী ও খালে চিংড়ির পোনা আহরণ করা হচ্ছে। এতে মৎস্য প্রজনন, বিস্তার ও বংশরক্ষায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পর্যটকদের আগমন বাড়লেও ইকো-ট্যুরিজম বলতে যা বোঝায়, সেটা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় ২ লাখ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বন সম্প্রসারণে অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়া গেছে। সুন্দরবনের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে মেরিন অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচার রিসার্চের প্রতিনিধি ড. নোরা ডেভো জানান, সুন্দরবন নিয়ে গবেষণায় ইতোমধ্যে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্যের গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে তিনি দৃঢ় আশাবাদী। সেমিনারে আলোচনা করেন সংস্থাটির প্রতিনিধি প্রফেসর অ্যান ফ্লেমিং, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ড. প্রতিভা সিং, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার সরকার। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক চামেলী সাহা।