বরিশাল বিএনপিতে 'মজিবর রহমান সরোয়ার হটাও' প্রশ্নে বিভিন্ন পক্ষ এক বছর আগে একটি প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সফলও হন। কিন্ত সরোয়ারবিরোধীদের ঐক্যের ফসল বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে শেষ পর্যন্ত ঐক্য থাকল না। এক বছরে মতবিরোধ প্রকাশ্যে এলো নগরের ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে। ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ নিয়ে কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক গত সপ্তাহে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। গত বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্র ঘোষিত শোক র‌্যালিতে মহানগরের নেতারা ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অবস্থানের ইঙ্গিত দিলেন।

আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী যুগ্ম আহ্বায়করা শোক র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করলেও তাঁদের অবস্থান ছিল আলাদা। প্রথা অনুযায়ী তাঁরা সামনের সারিতে না থেকে মূল র‌্যালির পেছনে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে আলাদা র‌্যালি করেছেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে মহানগর বিএনপির বিভক্তি প্রকাশ্যে চলে আসে।

শোক র‌্যালিতে অনুপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুল। এর আগে তিনি ওয়ার্ড কমিটি গঠনে তাঁকে ভুল না বোঝার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি সমকালকে বলেন, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সঙ্গে তাঁর স্বাক্ষরে ওয়ার্ড কমিটি গঠন হওয়ার কথা। কিন্তু ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারছেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে কমিটি দিচ্ছেন আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। এর সঙ্গে বৃহস্পতিবারের শোক র‌্যালিতে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি জড়িত কিনা- জানতে চাইলে আলী হায়দার বাবুল বলেন, তাঁর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা থাকায় তিনি আদালতে ব্যস্ত ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদার, আলতাফ মাহমুদ সিকদার, কেএম শহীদুল্লাহসহ মহানগর বিএনপির কয়েক নেতার নেতৃত্বে শোক র‌্যালির খণ্ডিত একটি অংশ মূল র‌্যালির পেছনে রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য প্রতিটিতে একজন যুগ্ম আহ্বায়ককে প্রধান করে ৮টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়।

টিমপ্রধান যুগ্ম আহ্বায়ক কেএম শহীদুল্লাহ, হাবিবুর রহমান টিপু ও শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে তাঁদের দেওয়া প্রস্তাবিত কমিটি ঘোষণা দেননি আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। যাঁদের পদায়ন করা হয়েছে তাঁদের বিষয়ে কিছু জানেন না টিমপ্রধানরা। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ উপেক্ষা করে অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। এতে দলে 'এক নেতা এক পদ' নীতি লঙ্ঘন করেছেন আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্যকারীদের সঙ্গে আমরা থাকব না।

মহানগরের সদস্য আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, তাঁরা (আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব) শুরু থেকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত মানছেন না। ক্ষমতাসীন দলঘেঁষা নেতাদের ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হচ্ছে। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের অসাংগঠনিক কার্যক্রমে দলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

এসব অভিযোগ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক সমকালকে বলেন, যুগ্ম আহ্বায়কদের সঙ্গে সৃষ্ট মনোমালিন্য বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তাই এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেবেন না।

গত বছর ৩ নভেম্বর বরিশাল মহানগর বিএনপির মনিরুজ্জামান ফারুককে আহ্বায়ক, আলী হায়দার বাবুলকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্য সচিব ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। গত জানুয়ারিতে ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর মাধ্যমে বরিশাল বিএনপিতে ৩ যুগের একক আধিপত্য হারান কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। এর পর থেকে সরোয়ারের আস্থাভাজনরা মহানগরের কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না।