- সারাদেশ
- 'তোমারে না দেখে বাবা কাজে যামু কেমনে'
শীতলক্ষ্যায় নৌকাডুবিতে তিন বন্ধুর মৃত্যু
'তোমারে না দেখে বাবা কাজে যামু কেমনে'

'বাবা বলে আর ডাকব না আমার পোলা। তোমারে সকালে না দেখে বাবা কাজে যামু কেমনে? ও বাবা, তুমি ওঠো, তোমারে নিয়ে বাজারে যামু। ওঠরে... বাবা ওঠ'- সন্তানের লাশের পাশে এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন মোহাম্মদ ভুট্টু।
গত শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর নবীগঞ্জ ঘাটে মেলা দেখে ফেরার পথে নৌকাডুবিতে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ জীম মারা যায়। সে নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র। এ দুর্ঘটনায় জীমের আরও দুই বন্ধু মো. রিফাত ও মো. শাওনের মৃত্যু হয়।
একসঙ্গে তিন বন্ধুকে হারিয়ে এলাকায় মাতম চলছে। কাঁদতে কাঁদতে স্বজনদের চোখের পানি গেছে শুকিয়ে। ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় মোহাম্মদ ভুট্টু। গতকাল শনিবার মরদেহ দেখতে তাঁর বোনরা এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় ভুট্টু বলতে থাকেন, 'এই দেখ বাবা, তোর সব ফুপু আইছে। তুই না ওখো বাড়িতে বেড়াতে যাইবি।' তাঁর এমন আর্তনাদে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
শহরের খানপুর মহল্লার আরেক পাশে রিফাতের লাশ নিয়ে স্তব্ধ পরিবার। কিছুক্ষণ পর পর বাবা শাহজাহান বেপারী হাউমাউ করে কাঁদছেন। ছেলের লাশের পাশে বসে তিনি বলছেন, 'ওরে বাবা তুই না দোকান খুলবি। ওঠ, তরে নিয়া দোকান খুলমু। কাল রাতে কলা কিনছি, আজ তরে নিয়া দোকানে কলা বেচমু। আমারে এহন কইব কেড্যায়, বাবা তুমি বাড়িত যাওগা, আমি বেইচ্যা আইতাছি।'
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফখরুদ্দিন আহমেদ জানান, নবীগঞ্জ মেলা থেকে ঘুরে নৌকায় করে শুক্রবার রাতে শহরের বাসায় ফিরছিলেন অন্তত ২৭ আরোহী। এ সময় একটি বড় জাহাজ পাশ দিয়ে গেলে জাহাজের ঢেউয়ে দুটি নৌকার ধাক্কা লাগে। এতে একটি নৌকা ডুবে গেলে অন্যরা সাঁতরে তীরে আসেন। কিন্তু সাঁতার না জানায় ডুবে মৃত্যু হয় তিন বন্ধু জীম, রিফাত ও শাওনের।
রাত ২টার দিকে লাশ উদ্ধার করেন দমকল বাহিনীর কর্মীরা। গতকাল ভোরে শাওনের মরদেহ নিয়ে সিলেটে চলে যান স্বজনরা। আর সকাল ১০টায় খানপুর চিলড্রেন পার্কে জীম ও রিফাতের একসঙ্গে জানাজা শেষে মাসদাইর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মন্তব্য করুন