সীতাকুণ্ডে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। উপজেলার কুমিরা রহমতপুর গ্রামে প্রায় প্রতিটি ঘরের কেউ না কেউ ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন। এই গ্রামে ১০০ জনের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। কেউ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। গত সপ্তাহে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের একটি দল গ্রামটি পরিদর্শন করেছে। তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের ডেঙ্গু বিষয়ে সতর্ক করেছেন। চিকিৎসকরা ওই গ্রাম পরিদর্শনকালে রোগীদের অবশ্যই মশারির ভেতরে থাকতে বলেছেন। এলাকাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, বৃষ্টির পানি যেন কোথাও তিন দিনের বেশি জমে না থাকে সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে কী কারণে রহমতপুরে এত ডেঙ্গু রোগী সে বিষয়ে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করে কিছু বলেননি।

বিআইটিআইডি হাসপাতাল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ৩০ জন, যাদের বেশিরভাগই কুমিরা থেকে আসা। সর্বোচ্চ একদিনেই ভর্তি হয়েছেন ৯ জন। গত মাসে হাসপাতালটিতে ১০৬ রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

গত বুধবার কথা হয় রহমতপুরের বাসিন্দা গৃহবধূ তানিয়া আক্তারের (১৯) সঙ্গে। তিনি বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁর পরিবারের আরও তিন সদস্য ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, শুরুতেই তাঁর স্বামী সালাউদ্দিনের জ্বর হয়। জ্বরের তৃতীয় দিন পরীক্ষা করাতে গিয়ে দেখেন তাঁর স্বামীর ডেঙ্গু জ্বর। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। এর মধ্যে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে গত শনিবার বাড়ি চলে যান। সালাউদ্দিনের পর দিন তার শাশুড়ি রহিমা বেগমে (৫৫) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর তাঁর দুই ননদ রিমা আক্তার (২০), রুমা আক্তারও (১৮) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখন তাঁর ১৮ মাসের ছেলে আবু সাঈদেরও ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়েছে। তিনি নিজেও অসুস্থ, তাঁর ওপর ছেলের অসুস্থতায় তিনি ভেঙে পড়েছেন।

ফাতেমা আক্তারও জ্বর নিয়ে বিআইটিআইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, তাঁদের গ্রামের প্রায় সব পরিবারে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী আছেন। কেউ হাসপাতালে যাচ্ছেন আবার কেউ স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ কারণে গ্রামে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

গ্রামের সর্দার মীর হোসেন বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে তাঁদের গ্রামে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। একজন-দু'জন করে ধীরে ধীরে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চার দিন আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিনিধি দল গ্রামে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কিছু নমুনা নিয়ে গেছে। কিন্তু আর কিছু জানায়নি।

কুমিরা বাজার এলাকার অরবিট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক কাজী রেজাউল করিম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে রহমতপুর গ্রাম থেকে আসা যেসব জ্বরের রোগী তাদের ল্যাবে পরীক্ষা করিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। বুধবার ছয়জন পরীক্ষা করিয়েছে, ছয়জনেরই ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। ওই গ্রামে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা না গেলে, পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে।'

রহমতপুর এলাকার ইউপি সদস্য মো. আলাউদ্দিন বলেন, 'গ্র্রামে ঘরে ঘরে ডেঙ্গুর প্রকোপের বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, ওই এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপের খবর পেয়ে বিআইটিআইডি থেকে তথ্য নিয়ে যাচাই করে সত্যতা পাওয়ার পর চিকিৎসকদের একটি দল পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা স্থানীয় মানুষকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।'

বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে আসা রোগীদের বেশিরভাগই বড়কুমিরা ও ছোট কুমিরার। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় আরও অসুস্থ রোগী আছে। একটি এলাকা থেকে এত রোগী আসা উদ্বেগজনক। ওই এলাকার দিকে নজর দেওয়া উচিত।' তিনি আরও বলেন, রোগী ৫-৬দিন জ্বরে ভোগার পর সুস্থ হচ্ছেন। তবে পরের তিনদিন খুব সাবধানে থাকতে হবে। ওই তিনদিন জ্বর না থাকলেও রোগীর অবস্থা খারাপ হতে পারে। কারও শরীরের অঙ্গ থেকে রক্ত বের হতে শুরু করলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।