- সারাদেশ
- জাহাজ ভাসানো উৎসব যেন সম্প্রীতির সম্মিলন
জাহাজ ভাসানো উৎসব যেন সম্প্রীতির সম্মিলন

রামুর বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসানো উৎসব। সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এ উৎসব সম্প্রীতির সম্মিলনে পরিণত হয় সমকাল
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেছেন, 'সকল সম্প্রদায়ের, সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে একসঙ্গে বসবাস করবেন- বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, এমন একটি সোনার বাংলাদেশ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এই বাংলাদেশকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আজকে বাঙালি জাতির যে প্রবহমান অগ্রযাত্রা, আমরা সকলে সেই জাহাজের সহযাত্রী। নাবিক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।'
বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব নাগরিককের ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সব সম্প্রদায়ের মানুষ সমান অধিকার, সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন। রামুর জাহাজ ভাসানো উৎসব আয়োজন, সেটাই প্রমাণ করে।'
১০ অক্টোবর রামুর বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসানো উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কক্সবাজার-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল উৎসবে সভাপতিত্ব করেন। জাহাজ ভাসানো উৎসবের উদ্বোধন করেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ।
বৌদ্ধদের প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রায় ২৫০ বছর আগে রামুর বাঁকখালী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসানো প্রচলন শুরু করেন তৎকালীন ধনাঢ্য রাখাইন বৌদ্ধরা। এরপর থেকে উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বড়ুয়া ও রাখাইনরা এ উৎসব আয়োজন করে আসছে। সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এ উৎসব সম্প্রীতির সম্মিলনে পরিণত হয়েছে। 'রামু সহিংসতা'র কথা উল্লেখ করে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, '২০১২ সালের বেদনাদায়ক সৃতি আজও পীড়া দেয়। সেদিন দেশের পরাজিত শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে চেয়েছিল। একটি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালিয়েছিল। বৌদ্ধমন্দির পুড়িয়ে দিয়েছিল, শত বছরের বাঙালির ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তারা হাজার বছরের পালি সাহিত্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল।'
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অর্পণ বড়ূয়ার স্বাগত বক্তব্যে ও সঞ্চালনায় উৎসবের শুরুতে মঙ্গলবাণী পাঠ করেন ভিক্ষু শীলপ্রিয় থের। নাচে-গানে বুদ্ধ কীর্তনে বাঁকখালী নদীতে ভেসে চলে নয়টি কল্পজাহাজ।
জাহাজ ভাসানো উৎসবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া প্রধান আলোচক ছিলেন। আশীর্বাদক ছিলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ও সৌগত সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় মহাথের। সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন সাংবাদিক নাজনীন মুন্নী। বিশেষ অতিথি ছিলেন রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরূপম মজুমদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, রামু থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ারুল হোসাইন, চেয়ারম্যান টিপু সুলতান চৌধুরী, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসাইন, বৌদ্ধ ঐক্য ও কল্যাণ পরিষদের সভাপতি তরুণ বড়ুয়া, প্রেস ক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া। কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, 'গৌতম বুদ্ধের সময় ভারতবর্ষে বৈশালী ছিল এক সমৃদ্ধ নগরী। একসময় ওই রাজ্যে ত্রিবিধ উপদ্রব দেখা দিল। দুর্ভিক্ষ, মহামারি ও অমনুষ্যের উপদ্রব। হৃদয়ছোঁয়া স্মৃতিকে অমলিন করে ধরে রাখার জন্য রামুতে সর্বপ্রথম রাখাইন বা মগদের দ্বারা কাগুজি কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসবের সৃষ্টি হয়।'
মন্তব্য করুন