করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের সালথায় আলোচিত সহিংসতায় সালথা উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল উপজেলার সোনাতলা ইউনিয়নের ফুকরা বাজার থেকে। যে কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় দেড় বছর দোকানপাট বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের নির্দেশেই গত শনিবার ফের দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে কয়েকজন আনসার সদস্যকে নিয়ে তৎকালীন সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি স্থানীয় ফুকরা বাজারে যান। এ সময় মানুষের জটলা দেখে তাঁর গাড়ি থেকে নেমে আনসার সদস্যরা বাজারে উপস্থিত কয়েকজনকে লাঠিপেটা করেন। তখন আনসার সদস্যদের সঙ্গে বাজারের লোকজনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ওই বাজারে স্থানীয় লোকজন জড়ো হতে থাকে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার পরে সেখান থেকে চলে এসে তৎকালীন সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পাঠান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালায়। এতে তার মাথা ফেটে যায়।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয়দের মধ্যে পুলিশের গুলিতে দু'জন নিহত ও দু'জন মাওলানার গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এতে বিক্ষুব্ধ কয়েক হাজার মানুষ সালথা থানা ঘেরাও করে। সে সময় ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও থানায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। পরে সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ এবং র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা যৌথভাবে ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) ও মিরান মোল্লা (৩৫) নামের দুই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ফুকরা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সেখানে নানা ধরনের শতাধিক দোকানপাট রয়েছে। দোকান মালিকরা বাজারে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আলোচিত সহিংসতার ঘটনায় বাজারটি বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। এতে বাজারের ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েন। দীর্ঘদিন পরে হলেও বাজারটি খুলে দেওয়ায় প্রশাসনকে ধন্যবান জানান ব্যবসায়ীরা। ফের দোকানপাট খুলতে পেরে তাদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।

সোনাপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাবু মোল্যা বলেন, প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের অনুমতিক্রমে ফুকরা বাজারের দোকানপাট খোলা হয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা এখন নিয়মিত দোকান খুলবেন। তবে ওই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড যাতে বাজার থেকে আর কোনোদিন না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের কড়াভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদীক বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক কারণে বাজারটি খুলে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে বাজারে মারামারি বা সহিংস কর্মকাণ্ড না করার অঙ্গীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা।