- সারাদেশ
- ক্রাচে ভর করেই ভাগ্য বদল
ক্রাচে ভর করেই ভাগ্য বদল

ইচ্ছার কাছে শারীরিক অক্ষমতার পরাজয়। ক্রাচে ভর করেই নিজের কারখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে হাত লাগান সাইফুল-সমকাল
ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অচল হয়ে যায় সাইফুল আলম মারুফের দুটি পা। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, পঙ্গু অবস্থায় বাকিটা জীবন হুইলচেয়ারে কাটাতে হবে। তখন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সাইফুল বলেছিলেন, 'আমি আবার হাঁটব, এই হাসপাতালেও আসব।' এখন তিনি শুধু ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছেনই না, পরিণত হয়েছেন দেশের হাজারো মানুষের ওপরে ওঠার সিঁড়িতে। শূন্য হাতে শুরু করলেও তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। ৩০ কোটি টাকার বেশি মূলধন নিয়ে পরিচালনা করছেন একটি কারখানা। তৈরি করছেন অটোরাইস মিল ও কৃষিতে ব্যবহূত নানা মেশিন ও যন্ত্রাংশ। কর্মসংস্থান হয়েছে দুই শতাধিক মানুষের।
সাইফুল আলমের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায়। ১৯৯৩ সালে মাধ্যমিক পাস করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। পরে বিএসসি ডিগ্রি নেন। বড় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও পান। ভালো বেতনে তরতর করে এগিয়ে চলে তাঁর জীবনের চাকা। ছন্দপতন হয় ২০০৬ সালে; সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত তিনি। তাঁর মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হারিয়ে ফেলেন হাঁটা ও দাঁড়ানোর শক্তি। তবে তিনি দুর্ঘটনার ওই অভিশাপের কাছে হার মানেননি। পরিশ্রমের মাধ্যমে বদলে ফেলেছেন নিজের ভাগ্য।
সাইফুল আলম বলেন, চিকিৎসকদের কাছে পঙ্গুত্বের কথা শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল। এরপর ফিজিওথেরাপি, বিভিন্ন ব্যায়াম ও সাঁতার কাটা শুরু করি। ধীরে ধীরে দাঁড়াতে সক্ষম হলাম, এক সময় মহান আল্লাহর রহমতে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটাও শুরু করি। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে না পারলেও মনোবল চাঙ্গা।
তিনি আরও বলেন, নিজের যা ছিল সব চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে যায়। কোনো পুঁজি না থাকায় অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পণ করি। কাজ শুরু করি তামাক, চামড়া ও চাল খাত আধুনিকায়নের। একপর্যায়ে আমার তৈরি রাইস সেক্টরে কালার সর্টিং মেশিন ব্যাপক সাড়া ফেলে। দেশের সাড়ে ৬০০ অটোরাইস মিলে এই মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সদর উপজেলার বটতৈল এলাকায় সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করেছি স্বপ্নের কারখানা 'গ্লোবাল সলিউশন মেশিনারিং।'
সরেজমিন তাঁর প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, বৃহৎ পরিসরে কারখানায় অটোরাইস মিলের ৯০ শতাংশ যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। একই কারখানায় বিভিন্ন মাঝারি শিল্পকারখানা ও গাড়ির নানা যন্ত্রাংশও তৈরি হচ্ছে। বাজার বিস্তৃত হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ২০ জেলায়। আলাদা ইউনিটে তৈরি হচ্ছে কৃষি যন্ত্রপাতি ও মেশিন।
মন্তব্য করুন