২০১২ সালে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে সৈকতে জেগে ওঠে রাখাইনদের দুইশ বছরের পুরোনো কাঠের একটি নৌকা। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেটি উত্তোলন করা হয়। ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের নৌকাটির ওজন ৯০ টন। সেই প্রাচীন নিদর্শনটি এক দশক ধরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে নৌকাটি। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকসহ রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে এবং সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহযোগিতায় নৌকাটি উত্তোলন করা হয়। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিন কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সেটি রাখা হয় কুয়াকাটা বৌদ্ধবিহারের পাশে বেড়িবাঁধের ওপর। সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেটি। কালের আবর্তে তাঁদের নানা নিদর্শন হারিয়ে গেলেও এটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী।

নৌকায় পাওয়া গেছে ভাঙা মৃৎপাত্রের টুকরো, ধানের বহিরাবরণ বা চিটা, পাটকাঠি, মাদুরের অংশ, পাটের তৈরি ছালা, তামার পেরেক, নারিকেলের মালা, ছোবড়া দিয়ে বানানো রশি এবং লোহার ভারী ও বিশালাকৃতির শিকল। এর মধ্যে বেশ কিছু নিদর্শন বরিশাল জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। এতে পিতলের প্রলেপ থাকায় অনেকে 'সোনার নৌকা' বলেন।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, রাখাইনদের পূর্বপুরুষরা এ নৌকায় চড়ে কুয়াকাটায় এসে বসতি স্থাপন করেন। মিয়ানমারের পূর্ব আরাকান থেকে বিতাড়িত হয়ে তাঁরা এ এলাকায় এসেছিলেন। ওই সময় ১৫০টি পরিবার ৫০টি কাঠের নৌকায় কুয়াকাটাসহ এ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় বসতি স্থাপন করে। স্থানীয় ম্যাচুসে রাখাইন বলেন, নৌকাটি যথাযথ স্থানে সংরক্ষণ করলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করত। পূর্বপুরুষের স্মৃতিটুকুও কালের সাক্ষী হয়ে থাকত।

মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধবিহারের সভাপতি মংলাচিন রাখাইন বলেন, নৌকাটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে পূর্বপুরুষের স্মৃতিটুকু হারিয়ে যাবে। তা হবে কষ্টকর।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসা পর্যটক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই সৈকতটি অনেক সুন্দর। বাড়তি আকর্ষণ দুইশ বছরের পুরোনো নৌকাটি। এটি কুয়াকাটার আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সাভার থেকে আসা রুবিনা ইয়াসমিন রুবী বলেন, নৌকাটি দেখতে খুবই সুন্দর।

কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টোয়াব) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, যতটা গুরুত্ব দিয়ে নৌকাটি তোলা হয়েছে, ততটা গুরুত্ব দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়নি।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, নৌকাটি সংরক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর উদ্যোগ নিয়েছে এবং তিনজন লোকও নিযুক্ত রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পৌরসভার কোনো সহযোগিতা চাইলে সেটি করা হবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, নৌকাটি সংরক্ষণের কাজ চলছে। একটি স্থায়ী সেট নির্মাণ করা হয়েছে। নৌকাটি সংস্কার ও সংরক্ষণের মাধ্যমে জাদুঘরে উন্মুক্ত করা হবে।