বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে ধুঁকছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দুই হাজার শিল্পকারখানা। বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো দিন ১২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। উৎপাদন সচল রাখতে জেনারেটর চালানোয় খরচ বেড়ে গেছে। লোডশেডিং না কমলে কলকারখানা চালু রাখা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া গ্যাসের চাপ কম থাকায় বোতলের গ্যাসে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। ফলে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার যাত্রামুড়া, বরাব, বরপা, ভুলতা, আড়িয়াবো, কর্ণগোপ, গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, হাটাবো, সাওঘাট, কাতরারচক, ডহরগাঁও, পাড়াগাঁও, মুড়াপাড়া, বানিয়াদিস এলাকায় অধিকাংশ শিল্পকারখানা অবস্থিত। এসব কারখানায় তৈরি হয় প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, থ্রিপিস, চাদর, প্রিন্ট কাপড়, লুঙ্গি, পল্গাস্টিক পণ্য ইত্যাদি। রয়েছে নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানাও।

কারখানার মালিকরা বলছেন, গ্যাস সংকট বেড়ে গেছে। ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। কারখানা চালু রাখতে ডিজেলচালিত জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সিএনজি স্টেশনের গ্যাস এনে উৎপাদন চালু রেখেছে। এতে প্রতিষ্ঠানের খরচ প্রায় ৫০ ভাগ বেড়ে যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ে আবাসিক খাতেও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

কাতরারচক এলাকায় অবস্থিত গ্রামটেক নিট ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক আইয়ুব হোসেন বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানা সচল রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্যাস দিয়ে জেনারেটর (ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ) চালানো যাচ্ছে না। গ্যাসের চাপ একদম কম থাকে। সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস কিনে জেনারেটর চালানো হচ্ছে।

গোলাকান্দাইল এলাকার জুনায়েত ফ্যাশন গার্মেন্টসের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, তাঁর কারখানায় টি-শার্ট তৈরি হয়। বিদ্যুৎনির্ভর কারখানাটিতে দিনে ১২ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। কারখানার ৩০০ শ্রমিককে দিনের একটা বড় সময় অলস বসে থাকতে হয়। এতে উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। কিন্তু শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য খরচ ঠিকই বহন করতে হচ্ছে। এতে লোকসান হচ্ছে।

ভুলতা এলাকার ভাই ভাই এমব্রয়ডারি কারখানার মালিক আলিনুর ব্যাপারীর একই অভিযোগ। তিনি বলেন, লোডশেডিং না কমায় লোকসান বেড়েই চলেছে। কাঞ্চন এলাকার বিএম টেক্সটাইল নামের চাদর উৎপাদন কারখানার ব্যবস্থাপক সাদিকুর রহমান বলেন, কাঞ্চনে প্রায় ৩০টির মতো চাদর তৈরির কারখানা রয়েছে। দেশের বাইরেও যায় এই চাদর। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে।

বরপা এলাকার অন্তিম নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানার এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে ডিজেলে। এতে মাসে এক কোটি টাকা খরচ বেড়ে গেছে। তারপরও প্রায় ২০ ভাগ উৎপাদন কম হচ্ছে।

গাউছিয়া পাইকারি কাপড়ের বাজারের ব্যবসায়ী ও সাকিব ফেব্রিক্সের মালিক সেলিম মিয়া বলেন, একদিকে সুতার দাম বেশি, অপরদিকে লোডশেডিং আর গ্যাস সংকট। এভাবে চললে শিল্প মালিকদের পথে বসতে হবে। এমব্রয়ডারি কারখানার মালিক আলামিন মিয়া বলেন, আগে যত থ্রিপিস এমব্রয়ডারি করতাম সেই তুলনায় কাজ কম হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ পলল্গী বিদ্যুৎ সমিতির সাওঘাট জোনের মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাচ্ছি। কোনো দিন শতকরা ৪০ ভাগ, আবার কোনো দিন ৩০ ভাগ লোডশেডিং হচ্ছে।