দুই শিশু বাড়ির পাশের মাঠে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। লাল-সবুজের ঘুড়িগুলো যেন আকাশ ছুঁতে চায়। শিশু দুটিও মনের আনন্দে তা উপভোগ করছে। মাঠে কৃষক তাঁর ফসল পরিচর্যা করছেন। রয়েছে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক মনীষীর ছবি। এগুলো পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবি।

জাতির পিতাকে জানার জন্য রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নারসহ শেখ রাসেল কর্নার। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের বীর সেনানীদের ছবি ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে রঙিন চিত্রে। বিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে ওজন ও উচ্চতা মাপার যন্ত্র।

সব স্কুলের আঙিনায় রয়েছে শহীদ মিনার। রং-তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে বিদ্যালয়গুলোকে শিশুবান্ধব করার চেষ্টা চলছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ছোটবেলা থেকেই শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে, জানতে পারছে দেশ-প্রকৃতি। শিশুমনে শ্রেণি পাঠ সহজবোধ্য হচ্ছে। বেশি করে বিদ্যালয়গামী হচ্ছে শিশুরা।
সম্প্রতি মাধপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন একজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে শুনছে শিক্ষকের কথাগুলো। পাশের দেয়ালে নানা চিত্রের পাশে রয়েছে ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর, সাত দিনের নাম।

কাজীপুর বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে রয়েছে মীনা ও রাজু বই হাতে বিদ্যালয়ে যাওয়ার ছবি। বাংলা বিভিন্ন বর্ণের পাশাপাশি রয়েছে মনীষীদের বাণী। ফুল ও আল্পনায় শোভা পাচ্ছে দেয়ালগুলো।

উপজেলার ১৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির সব কক্ষ সুসজ্জিত করা হয়েছে। ২৫ ভাগ বিদ্যালয়ের ভবন ও সব শ্রেণির কক্ষ সজ্জিতকরণ হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে প্রকল্প নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানো হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি প্রাইমারি স্কুল পিইডিপি-৪-এর আওতায় স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (স্লিপ) অংশ হিসেবে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পাচ্ছে।

আমাইকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তোয়া মণি জানায়, স্কুলে এলে তাদের মনে আনন্দ লাগে। ছবি দেখে অনেক কিছু শিখতে পারছে।
কাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইমা খাতুন বলে, 'এখন স্কুলে এসে বিরক্ত লাগে না। সাজানো-গোছানো, এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের।'
স্কুলে আসতে ভালো লাগে বলে জানিয়েছে বামনডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী আফিফা জাহিন জেসি।

বামনডাঙ্গা গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগেও এ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলটি ছিল ভাঙাচোরা। এ কারণে ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয় না যেতে নানা ফন্দি আঁটত। এখন স্কুলটি নানা রঙে সাজিয়ে তোলায় শিশুরা নিজ থেকেই স্কুলে যাচ্ছে।

কাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মাওলানা নিজাম উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, আগের ভবনটি ছিল জীর্ণ। সরকারি বরাদ্দ দিয়ে বিদ্যালয়টিকে সুসজ্জিত করা হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আগ্রহ বেড়েছে।

বিদ্যালয়টি সুসজ্জিত করায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিশুবান্ধব হয়েছে বলে মনে করেন মাধপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রভাষক সালাউদ্দিন আহমেদ, সদস্য সাবিনা খাতুন ও প্রধান শিক্ষিকা রাশিদা খাতুন। তাঁরা জানান, শিক্ষার্থীদের শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং স্কুলমুখী করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শিশুরা এখন বিদ্যালয় ছেড়ে কিন্ডারগার্টেন বা অন্য স্কুলে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আমাইকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা
মনজুরা পারভীন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, সরকারি অর্থায়নে বিদ্যালয়গুলোকে পরিপাটি করার চেষ্টা চলছে। ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। বিদ্যালয়ের দেয়ালে নানা ছবি, বর্ণনায় তাদের জ্ঞানের দুয়ার সহজে খুলে যাচ্ছে। পাঠের সঙ্গে নানা উপকরণ ব্যবহারে শিশুদের একঘেয়েমি বা বন্দিদশা থাকছে না। বিদ্যালয় হয়ে উঠেছে শিশুদের জন্য আনন্দমুখর। ইউএনও মাসুদ হোসেন বলেন, সরকারের এমন উদ্যোগে ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছে শিশুরা।