পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোফরান রানার মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন চরমে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস, এর পাল্টা জবাব এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মেয়র বাদী হয়ে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা এখন দারুণ আলোচিত। আদালত মেয়রের মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে সিআইডিকে। মেয়র ও কাউন্সিলের এ বিরোধ নিষ্পত্তি করতে মামলা হওয়ার আগে ২৯ সেপ্টেম্বর পৌরসভার মাসিক সভায় আলোচনা হয়। এতে উভয়ে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরেন। পরে গত ঈদে মিলাদুন্নবীর জুলুসে মেয়র ও কাউন্সিলর একসঙ্গে অংশগ্রহণও করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে পৌর মেয়রের কার্যালয়ে একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ারও ছবি ফেসবুকে ভাইরালও হয়। এরপরও গত ৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে মেয়র বাদী হয়ে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে এ মামলা করেন।

তবে মেয়র-কাউন্সিলের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চললেও সর্বশেষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দু'জনে যৌথভাবে কেক কেটে একে অপরকে খাইয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল ও কাউন্সিলর গোফরান রানার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ চলে আসছিল; যা বর্তমানে প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর গোফরান রানা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে লেখেন, 'জনগণের প্রতিনিধি হয়ে মেয়র দাপ্তরিক কাজ ফেলে দিনের পর দিন সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ও তেল জ্বালিয়ে নিজের মানুষদের যুবলীগের জেলা কমিটিতে আনার জন্য রাজধানীতে সময় ব্যয় করছেন। জনগণ কিন্তু সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দাপ্তরিক কাজ স্তিমিত হয়ে আছে। আমরাও জনপ্রতিনিধি হিসেবে সমালোচিত হচ্ছি। ভারপ্রাপ্ত কাউকে মেয়রের দায়িত্ব দিয়ে গেলেই তো হয়।' এরপর তিনি আরেকটি পোস্টে লেখেন, 'পটিয়া পৌরসভার মেয়র আমি আপনার প্রতিপক্ষ নই। আপনার নীতির কথা তুলে ধরার ইচ্ছে আমার ছিল না। তবে জনগণকে জানানোর জন্য আপনি বাধ্য করলেন। তাই নিরুপায় হয়ে আমাকে কয়েকটি সত্য তুলে ধরতেই হবে। আপনি পারলে উত্তর দেবেন। আমি আপনার ছোট ভাই এবং আপনার পরিষদের সদস্য। আপনার একগুয়েমি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার আমি তুলে ধরব। দেখলাম কিছু ফেক আইডি থেকে আমার ধারার কিছু মানুষ ও লিখছে। খুব ভালো লাগল, লিখুন।'

এদিকে গোফরান রানার এসব ফেসবুক পোস্টের জবাব দিয়ে পটিয়া পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বাবুল তার ভ্যারিফাইড আইডিতে পোস্ট দেন। তিনি লিখেন, বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি পৌরসভার ডাম্পিং স্টেনের প্রশাসনিক অনুমোদন, শিশু পার্ক স্থাপন ও পটিয়া শ্রীমাই খাল খননের অর্থ বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে গেছেন। হুইপের সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন। পৌর বেওয়ারিশ কবরস্থানের মাটি ভরাটের জন্য পত্র দিয়েছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পৌর এলাকায় ফুটপাত থেকে ফুটপাত, বাইপাস টু বাইপাস, কার্পেটিং ও ওয়াশার সংযোগ প্রদানের জন্য সচিব ও সংশ্নিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন।

কাউন্সিলর গোফরান রানা বলেন, পৌরসভার মেয়র সাইবার ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন, তা তিনি অবগত আছেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।

মেয়র আইয়ুব বাবুল মামলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করা উচিত নয়।'
৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলরের যে দ্বন্দ্ব ছিল তা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় নিষ্পত্তি করা হয়েছিল।'