
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আড়তে শনিবার সকালে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতার ভিড়-সমকাল
দীর্ঘ ২২ দিন অলস সময় কাটিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় পদ্মা-মেঘনায় নামতেই ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। এতে খুশি ধরছে না মুন্সীগঞ্জের জেলেদের। গতকাল শনিবার মাওয়া মৎস্য আড়তে কথা হয় জেলে কালাম ও মারফত উল্যাহর সঙ্গে। তাঁরা বলেন, আগের রাত থেকে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে তাঁদের। জালে মাছও ধরা পড়ছে প্রচুর। প্রথম দিনেই যে মাছ পাওয়া গেছে তা কয়েক বছরের তুলনায় আকারে বড়।
আড়তদার মো. লিটন হোসেনের মতে, প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে দামও ক্রেতা-বিক্রেতার নাগালে। এর সত্যতা মেলে রাজধানী ঢাকার মধ্য বাসাবো থেকে মাছ কিনতে আসা রাসেল মিয়ার কথায়। তিনি বলেন, 'টাটকা ইলিশ কেনার জন্য শনিবার ভোরে আড়তে এসেছি। ছয় দিন আগে যে মাছ ৫ হাজার টাকায় কিনেছি, শনিবার সেই আকৃতির মাছ ৪ হাজার টাকায় কিনেছি।' দাম কম থাকায় আগের চেয়ে বাজারে তাঁর মতো ক্রেতার ভিড়ও বেড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির মিয়া বলেন, মাওয়ার মৎস্য আড়তে বড়, মাঝারি ও ছোট সব আকারের ইলিশ আসছে। সকালে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে আড়ত। প্রচুর বেচাকেনা হচ্ছে। আড়তের কাছাকাছি বাড়ি হওয়ায় দূরের আত্মীয়স্বজন তাঁর মাধ্যমে প্রতিদিন মাছ কেনেন।
খুচরা মাছ বিক্রেতা রুবেল মিয়া জানান, মাওয়া আড়তে এখন সব পদ্মার ইলিশ। দিনরাত জেলেরা মাছ ধরে ভোরে আড়তে বিক্রি করতে আসছেন। এখন প্রচুর ইলিশ মাছ আসছে।
পদ্মায় মাছ শিকার করে আসা আক্তার হোসেন বলেন, 'নদীর গভীরে গিয়ে ইলিশ শিকার করছি। এখন ছোট-বড় সব আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তাই দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।'
আরেক জেলে খোকা মোল্লা বলেন, 'রাত থেকেই নদীতে ইলিশ ধরা হয়েছে। প্রথম দিন আশানুরূপ মাছ পাইনি। তবে ধরা পড়া অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম রয়েছে। এখন যা ইলিশ পেয়েছি তা ঘাটে বিক্রি করে আবার নদীতে ফিরে যাব।'
মাওয়া আড়তে ওঠা পদ্মার ইলিশের চাহিদা দেশজুড়ে। এখানে মোট ৩৭ জন আড়তদার আছেন। তাঁদের কাছে মাছ বিক্রি করেন জেলার লৌহজং, শরীয়তপুর, মাদারীপুরের শিবচর, পাবনা, চাঁদপুর ও সিরাজগঞ্জের অন্তত ১০ হাজার জেলে। সেখান থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যান দেশের নানা স্থানে।
গতকাল এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ আড়তে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। যা কিছুদিন আগে বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। মাঝারি আকৃতির (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকায়। আগে যা কেজিপ্রতি বিক্রি হতো ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
মাওয়া মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম বলেন, জেলেরা সবে ইলিশ ধরা শুরু করেছেন। সকাল পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মণ ইলিশ ঘাটে এসেছে। কয়েক দিন পর ইলিশ আহরণ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর ৩০ কিলোমিটার তীর ঘেঁষে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, শ্রীনগরের ভাগ্যকুল ও সদর উপজেলার কিছু অংশের অবস্থান। এ ছাড়া সদর ও গজারিয়া উপজেলার ৩৫ কিলোমিটার এলাকাসংলগ্ন মেঘনা নদী। এই ৬৫ কিলোমিটার নদীর অংশ ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষিত এলাকায় পড়েছে। জেলায় ইলিশ ধরা জেলের সংখ্যা তিন হাজার ছয়শর বেশি।
প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় মাছ ধরা বন্ধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীকে নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এবার ইলিশ উৎপাদন বেশি হবে বলে আশা করছেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। পাশাপাশি সিত্রাংয়ের প্রভাবে অবাধে ডিম ছাড়তে পেরেছে মা ইলিশ। যে কারণে এবার ইলিশ উৎপাদনে আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা তাঁদের।
মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল আলম শনিবার সকালে বলেন, এবার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে নদীতে পানি অনেক বেড়েছে। এতে সাগর থেকে পদ্মা-মেঘনার মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। ফলে নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। মাছের আকারও বেশ বড়। দু-তিন কেজি ওজনের ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে।'
প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড সদস্যদের নিয়ে মৎস্য বিভাগের যৌথ অভিযান এবার সফল হয়েছে বলে দাবি করেন মো. শামশুল আলম। ফলে এবার প্রচুর পরিমাণ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। তাই এবার উৎপাদনে রেকর্ডের আশা করছেন তিনি।
মন্তব্য করুন