- সারাদেশ
- চিংড়ি চাষে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে 'সেফটি' প্রকল্প
চিংড়ি চাষে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে 'সেফটি' প্রকল্প
উদ্যোগ

বাংলাদেশে সেফ অ্যাকোয়া ফার্মিং ফর ইকোনমিক অ্যান্ড ট্রেড ইমপ্রুভমেন্ট বা সেফটি প্রকল্প চিংড়ি চাষে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ হাজার কৃষক বাগদা ও গলদা চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন এবং এর ফলে তাঁদের আয় বেড়েছে। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগীর মধ্যে ১৫ শতাংশ নারী কৃষক। প্রকল্পটি চিংড়ি খাতে সক্ষমতা তৈরি করে বাণিজ্য ও রপ্তানি মূল্য বাড়াতে অবদান রাখছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) ছয় বছর মেয়াদের প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করেছে। স্থানীয় এনজিও বিএসএফএফ, কোডেক ও টিএমএসএসের সহযোগিতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে উইনরক ইন্টারন্যাশনাল। সম্প্রতি 'ট্রান্সফর্মিং শ্রিম্প অ্যান্ড প্রন প্রডাকশন ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রকল্প সমাপনী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ আয়োজনের মাধ্যমে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, খুলনা বিভাগের পাইকগাছা, ডুমুরিয়া; যশোর জেলার অভয়নগর, বাগেরহাট সদর, রামপাল, চিতলমারী; সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর এবং কক্সবাজার জেলায় 'সেফটি' প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার প্রত্যক্ষ এবং ৪ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি পরোক্ষ সুবিধাভোগীর কাছে প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছবে। প্রকল্পের লক্ষ্য হলো, চিংড়ি ও চিংড়ির হ্যাচারি এবং খামারের উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার উন্নতির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনশীলতা ও পরিবেশগত স্থায়িত্বে অবদান রাখা। মধ্যস্থতাকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে সেবা ও ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে এবং সরকারি বাণিজ্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষিপণ্যের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বিভিন্ন সংস্থার সমজাতীয় প্রকল্প থেকে অভিজ্ঞতা গ্রহণ করে এর কাজ নির্ধারণ করেছে এবং মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে।
প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের আর্থিক সহায়তায় সেফটি প্রকল্প ক্ষুদ্র চিংড়িচাষিদের মধ্যে উন্নত চাষ পদ্ধতির সফল বিস্তার ঘটিয়েছে, যা চিংড়ি উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত পোনার উৎপাদন বাড়িয়ে হ্যাচারিগুলোর সঙ্গে ক্ষুদ্র চাষি পর্যায়ে সংযোগ স্থাপনে কাজ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। সে ক্ষেত্রে সেফটি প্রকল্প একটি অনন্য উদাহরণ, যা দুই দেশের সম্পর্কের উষ্ণতা এবং যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক পরিবেশ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছে তার নজির। সেফটি প্রকল্পের আওতায় মৎস্য অধিদপ্তরের ১২০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তাঁরা অংশীজনের মাঝে লব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়ে মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করছেন।'
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, 'বাগদা চিংড়ি বাংলাদেশের অহংকার। চিংড়ি চাষের সফলতা ধরে রাখতে ছোট খামারিদের উদ্ভাবিত চাষ পদ্ধতি বাস্তবায়নে এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অংশীজনকে এগিয়ে আসতে হবে। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, 'সেফটি উদ্ভাবিত উন্নত চাষ পদ্ধতি মাঠ পর্যায়ে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে দেখেছি। এ চাষ পদ্ধতি সফল বলেই প্রমাণিত। আমরা মাঠ পর্যায়ে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ সম্প্রসারণের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি।' ইউএসডিএর আন্তর্জাতিক কর্মসূচি বিশেষজ্ঞ ভিক্টোরিয়া বেকার বলেন, ইউএসডিএ কৃষি খাতে সম্পৃক্ত শিল্প ও অংশীজনদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে, যা বাংলাদেশের চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত খামারিদের জীবন-জীবিকা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রকল্পের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন চিফ অব পার্টি এসএম শাহীন আনোয়ার। তিনি জানান, সেফটি প্রকল্পের বেইজলাইন জরিপ অনুসারে, ২০১৭ সালে যেখানে চিংড়ির বার্ষিক গড় উৎপাদন ছিল প্রতি হেক্টরে ২৯৫ কেজি; সেফটি প্রকল্প প্রস্তাবিত উন্নত চাষের ছয়টি পদক্ষেপ অনুসরণ করার পরে ২৫ হাজার চিংড়িচাষির গড় উৎপাদন ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬৪ কেজি, যা ১২৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া প্রত্যেক চিংড়িচাষির বিক্রয়মূল্য ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৪ ডলার, যা ২০১৭ সালে ছিল ৯১৮ ডলার।
সমাপনী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ মৎস্য অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, কৃষকসহ চিংড়ি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন। উইনরক ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. মেসবাহুল আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন