- সারাদেশ
- তবুও বন্ধ হয়নি ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ
কুড়িগ্রামের উলিপুর
তবুও বন্ধ হয়নি ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ
-samakal-6371e16ae674d.jpg)
উলিপুরের তবকপুর ইউনিয়নের নিরাশির পাথারে ফসলি জমিতে নির্মিত ইটভাটা-সমকাল
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের নিরাশির পাথারে ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা। এলাকার কৃষকরা একজোট হয়ে এর প্রতিবাদ করলেও বন্ধ হয়নি নির্মাণকাজ। পরে ফসলি জমি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ভাটার কাজ বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন বন্ধ করলেও নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছেন প্রভাবশালী মালিক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফসলি জমির ওপর ইটভাটা নির্মাণে ইট ও বালু ফেলা হয়েছে। নির্মাণ চলছে চিমনি ও চুল্লির কাজ। প্রায় ১৫ বিঘা ফসলি জমি লিজ নিয়ে ভাটা তৈরি করা হচ্ছে। এর চারপাশেই রয়েছে আমন ধানের ক্ষেত। আরও জমি লিজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন মালিক।
কৃষকরা জানান, উপজেলার খামার তবকপুর তেলীপাড়াসহ এলাকার পাঁচ গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভাটার পাশের জমিতে আমন ও বোরো ধান হয়। ইটভাটা নির্মাণ হলে উৎপাদন কমে যাবে। আশপাশের পরিবেশ দূষণ হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও নির্মাণকাজ বন্ধ করা যায়নি।
খামার তবকপুর তেলীপাড়া গ্রামের নাজমুল হক বলেন, প্রতি বছর এ এলাকায় নতুন নতুন ইটভাটা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করলে উল্টো বিপদে পড়তে হয়। আইন অনুযায়ী কৃষি জমি, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে, সরকারি বা ব্যক্তিগত বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা মানছেন না বেশিরভাগ মালিক।
ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করছেন তবকপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদার রহমান বকুল। তিনি বলেন, ১০-১২ জন কৃষকের জমি লিজ নিয়ে ইটভাটা করা হচ্ছে। কৃষকদের বোরো ও আমন মোসুমে একরপ্রতি ১২৬ মণ ধান বা সমপরিমাণ মূল্য দেওয়ার শর্তে জমিগুলো নেওয়া হয়েছে। জমির মালিকদের অভিযোগ না থাকলেও একটি মহল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ইটভাটার জন্য জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় অন্তত ৩০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ছাড়পত্র আছে মাত্র পাঁচটির। বন্ধ রয়েছে ১০টি। বাকিগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইট তৈরি করছে। নিরাশির পাথার জলাভূমিতে তিনটি ইটভাটা রয়েছে। কালুডাংগা ও শান্তিপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে দুটি। এর মধ্যে একটি ডিএসবি ইটভাটার মালিক দেলওয়ার হোসেন জানান, লাইসেন্সের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। কাঠ পেড়ানো নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুল্লি জ্বালানোর সময় সব ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের খবর পেয়ে উলিপুর প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাদের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স নেই, তাদের ভাটায় দ্রুত অভিযান চালানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, অভিযোগ পেয়েছেন। ওই ভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে। জেলা প্রশাসককেও অবহিত করা হয়েছে। তার পরও কাজ বন্ধ না হলে আবার অভিযান চালানো হবে।
মন্তব্য করুন