ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ নিউমোনিয়া বাড়ছে শেরপুরে। ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে রোববার ভর্তি হয়েছে ১৬৮ শিশু। ভর্তি হয়েছেন অনেক বৃদ্ধও। তাঁরা জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কাঁপুনি, বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। শীতের শুরুতে হঠাৎ নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। প্রতিদিন শত শত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক ও নার্সরা রাত-দিন সেবা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর মধ্যে রোববার নতুন করে ৪২ ডায়রিয়া রোগী ভর্তির পাশাপাশি নিউমোনিয়া আক্রান্ত ১৬৮ শিশু ভর্তি হয়েছে। তাদের সঙ্গে হাসপাতালে এসেছেন স্বজনরাও। এ কারণে তিল ধারণের জায়গা নেই হাসপাতালে। শয্যা না থাকায় বারান্দা থেকে শুরু করে মেঝে পর্যন্ত সব জায়গায় রোগী আর রোগী।

সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের প্রচণ্ড ভিড়। চিকিৎসক ও নার্সরা শিশুদের নেবুলাইজারের মাধ্যমে ওষুধ দিচ্ছেন। আবার প্রয়োজনমতো অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনও দেওয়া হচ্ছে। ইনজেকশন দেওয়ার সময় শিশুদের চিৎকারে মা-বাবাও কাঁদছেন। সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে হাসপাতালে।

নকলা উপজেলা থেকে আট মাস বয়সী শিশু ফাইফাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তার বাবা মো. শুভ। তিনি জানান, শিশু বিশেষজ্ঞ নূরনবীকে চেম্বারে দেখানোর পর ফাইফাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন। হাসপাতালে আনার পর অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলার হযরত আলী ১১ মাসের ছেলে আবু হুরায়রাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, শ্বাসকষ্ট, জ্বর নিয়ে এসেছি। নার্সরা নেবুলাইজ করেছেন। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। এখন একটু ভালো।

হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ কোহিনুর জাহান শ্যামলীর ভাষ্য, শীতের শুরুতেই নিউমোনিয়ার প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। রোগী বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিস্টামিন, জ্বর থাকলে জ্বরের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এটি ভাইরাল নিউমোনিয়া। রোগ সারতে ৭ থেকে ১১ দিন লেগে যাচ্ছে। মায়েদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে- তাঁরা ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের যেন শুধু বুকের দুধ খাওয়ান। তাহলে নিউমোনিয়া কম হবে। পাশাপাশি শিশুদের সুষম খাবার ও ভিটামিন 'এ' খাওয়াতে হবে। ঠান্ডা লাগানো যাবে না।

জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়। এটি মৃদু বা হালকা থেকে জীবনহানিকরও হতে পারে। যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। এসব কারণে রোগীদের নিয়ে খুবই সিরিয়াস তাঁরা। তিনি বলেন, হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। চিকিৎসকরা রোগী বুঝে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। আমরা বিনামূল্যে সেসব ওষুধ সরবরাহ করছি।