- সারাদেশ
- ৫০০ লোকের ভাতা হাওয়া
৫০০ লোকের ভাতা হাওয়া

কেন্দুয়া সমাজেসেবা কার্যালয়
'আমার বয়স্ক ভাতার টেহা (টাকা) পাইতাছি না। প্রতারণা কইর্যা ভুল নম্বরে আমরার অনেকেরই ভাতা লইয়্যা গেছেগা। ০১৬১৮১৬২৯২৭ নম্বরে এতদিন ভাতার টেহা আইত। কিন্তু এবার আর এই নম্বরে ভাতার টেহা আইছে না। উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গেলে কর্মকর্তারা কয় (বলেন) ভুল নম্বরে টাকা চলে গেছে। থানায় জিডি করেন অথবা আমাদের কাছে আবেদন করেন। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।' কথাগুলো বলছিলেন কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের মনাটিয়া গ্রামের হাদিস মিয়া।
হাদিস মিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৭২১৪৭২০০৫৭৯৩৮। এতদিন ০১৬১৮১৬২৯২৭ নম্বর থেকে টাকা উত্তোলন করতেন তিনি। তাঁকে অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ভুল নম্বরে টাকা চলে গেছে। ভুল নম্বরটি ০১৭৫৬২৬৩১৭৯। কেবল হাদিস মিয়া নন, উপজেলার প্রায় ৫০০ সুবিধাভোগীর টাকাও উধাও। তাঁরা দিনের পর দিন সমাজসেবা কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও সমাধান পাচ্ছেন না। তবে তাদের আগের নম্বরে যাতে পরবর্তী ভাতার টাকা যায়, সে জন্য একটি আবেদন নিচ্ছে সমাজসেবা কার্যালয়।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কেন্দুয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে মোট বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার। বিধবা ভাতাভোগী ৯ হাজার এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী সাড়ে ৩ হাজার। তাঁদের প্রত্যেকেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদে টাকা পেতেন। সম্প্রতি প্রায় ৫০০ ভাতাভোগী পড়েছেন প্রতারক চক্রের ফাঁদে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার আইডি হ্যাক করে ভুল নম্বরে টাকা নিয়ে গেছে। নগদে তাদের নির্ধারিত নম্বরে এতদিন টাকা উত্তোলন করলেও এখন আর ওই উত্তোলন করতে পারছেন না তাঁরা।
গড়াডোবা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান খান সোহাগ বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার আইডি (পাসওয়ার্ড) হ্যাক করে ভুল নম্বরে প্রায় ৫০০ লোকের ভাতা নিয়ে গেছে একটি চক্র। যে পাসওয়ার্ডটি একমাত্র সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ছাড়া আর কারও জানার কথা নয়। ভুক্তভোগীরা বারবার সমাজসেবা কার্যালয়ে গেলে তাঁদের আগের নম্বর থেকে টাকা তোলার জন্য একটি আবেদন নেওয়া হচ্ছে এবং জিডির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
চেয়ারম্যান সোহাগ জানান, ৩১ অক্টোবর উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় ১৩ ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে ভাতা নিয়ে কেলেঙ্কারির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তবে ওই সভায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় ইউএনও কাবেরী জালাল সভায় জানিয়েছেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সুবিধাভোগীদের ভাতা পেতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমান সমকালকে বলেন, 'প্রতারক চক্র আমার (উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা) আইডি হ্যাক করে দুই শতাধিক সুবিধাভোগীর ভাতার টাকা নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক বরাবর পরপর তিনটি চিঠি দিয়েছি।' তার দাবি, অধিদপ্তরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যেসব ভুল নম্বরে টাকা গিয়েছিল, সেগুলো ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। প্রতারক চক্র আর ওই নম্বর থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না বলেও দাবি তাঁর। তিনি আশা করেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসের দিকে প্রত্যেক সুবিধাভোগীর নম্বরে টাকা চলে আসবে।
সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমান বলেন, অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর পরপর তিনটি চিঠি দেওয়া হয়। সেখান থেকে সমাধানেরও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ কারণে থানায় কোনো জিডি করেননি।
মন্তব্য করুন