এক বছর আগে ৩০ নভেম্বর ছাত্রলীগ নেতাদের মানসিক নির্যাতনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন। দেশব্যাপী আলোচিত এই ঘটনায় জড়িত থাকায় চারজনকে স্থায়ী বহিস্কারসহ ছাত্রলীগের ৪৪ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন ধরনের দণ্ড দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় কুয়েটে কিছুদিনের জন্য স্থগিত ছিল ছাত্র রাজনীতি। এক পর্যায়ে গত সেপ্টেম্বরে কুয়েট ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। সময়ের সঙ্গে প্রলেপ পড়েছে স্মৃতিতে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন দণ্ডপ্রাপ্তরা। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগের পুরোনো কমিটির দণ্ডপ্রাপ্ত নেতারাই এখন নতুন কমিটির কাণ্ডারি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে কুয়েটে এসে কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত এবং উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক আল মামুন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আল মামুন সমকালকে বলেন, কুয়েটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৪৫ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কমিটি গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দ্রুত কমিটি ঘোষণার সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, সবার জন্য উন্মুক্ত থাকায় হল কমিটির জুনিয়র নেতারাও জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। ৪৫ জন পদপ্রত্যাশী হলেও মূলত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন ১০ জন।

এর মধ্যে সভাপতি পদে সাবেক সহসভাপতি রুদ্র নীল সিংহ শুভ, সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক যে কোনো পদে তারিকুল ইসলাম তিলক, একেএম নিবিড় রেজা, রাগিব আহসান মুন্না, রিফাত জাহান নিলয়, তাহমিদুল হক ইশরাক, প্রান্ত কর্মকার, ইমরান হোসেন আওয়াল, রেজওয়ানুল হক রিফাত ও মেহেদী হাসান মুন্নার জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে। তাঁদের অনেকেই দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিংয়ে ব্যস্ত তাঁরা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষক মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকায় রুদ্র নীল সিংহ শুভ, তাহমিদুল হক ইশরাক ও এসএম রাগিব আহসান মুন্নাকে দুই শিক্ষাবর্ষ বহিস্কার এবং আবাসিক হল থেকে আজীবন বহিস্কার করা হয়েছিল। এক শিক্ষাবর্ষ বহিস্কার করা হয় প্রান্ত কর্মকার ও ইমরান হোসেন আওয়ালকে। নতুন কমিটির দৌড়ে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে।

এ ছাড়া ২০২১ সালে কুয়েট সংলগ্ন যোগীপোল ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করায় রুদ্র নীল সিংহ ও একেএম নিবিড় রেজার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠি দিয়েছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান।

অভিযুক্ত নেতারা ঢাকায় থাকায় সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। রুদ্র নীল সিংহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সিদ্ধান্তে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এর কার্যকারিতা নেই। আমরা ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি। আওয়ামী লীগের ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠিটি ভিত্তিহীন। ছাত্রলীগ করে নৌকার বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর সুযোগ কোথায়?

একেএম নিবিড় রেজা বলেন, নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিষয়টি আনিসুর রহমানকে ফোন করলে জানা যাবে।
এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মারা যাওয়া ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের স্ত্রী সাবিনা খাতুন।

ওই সময় শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি ও ছাত্র রাজনীতি স্থগিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হেলাল আল নাহিয়ান বলেন, কমিটি করা ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়। তারাই খোঁজখবর নেবে। আমাদের প্রত্যাশা, ছাত্ররা তাদের ন্যায়সংগত দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করবে। অতীতের মতো নেতিবাচক কোনো কাজে তারা নিজেদের জড়াবে না।

কুয়েটের রেজিস্ট্রার আনিসুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ড. সেলিমের সব পাওনা তাঁর পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর চাকরির বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের বিষয়। এজন্য এ কাজে সময় লাগছে।