রাজশাহীর ‘হোটেল এক্স’-এ সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে পুলিশের সামনেই একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ নেয়। এতে রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা রাজপাড়া থানা ঘেরাও করে ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন। বিকেল চারটা থেকে শুরু করা থানা ঘেরাও কর্মসূচি সাংবাদিকরা প্রত্যাহার করেন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হোটেল এক্স এর দুজনকে গ্রেপ্তার ও ওসিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

এর আগে দুপুরে রাজপাড়া থানা সংলগ্ন ‘হোটেল এক্স’ নামের একটি আবাসিক হোটেলে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার মো. আনিসুজ্জামান। বিতর্কিত ওই হোটেলে দুটি কোচিং সেন্টার রাজশাহীর সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গিয়ে একটি অনুষ্ঠান করছিল। সম্প্রতি এই হোটেলে ডিজে পার্টির নামে অশ্লীল নৃত্যের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এই বিতর্কিত আবাসিক হোটেলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কেন নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে একজন অভিভাবক সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে ফোন করে জানালে তিনি তা দেখতে যান।

সাংবাদিক আনিসুজ্জামান জানান, তিনি হোটেলে গিয়ে দেখেন, হোটেলের দোতলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাচগানের অনুষ্ঠান চলছে। তিনি এর একটি ছবি নিয়ে বের হচ্ছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা তাকে আটকে রাখেন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তার ফোন থেকে ছবি ডিলিট করার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপনসহ কয়েকজন সাংবাদিক। তারা প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকা সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে পুলিশের উপস্থিতিতে উদ্ধার করে হোটেল থেকে বের হচ্ছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা আবারও পুলিশের সামনেই সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পুলিশ তখন নির্বিকার ছিল। এ সময় ওই এলাকার এক দুর্বৃত্ত হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রকাশ্যেই হত্যার হুমকি দিতে দেখা যায়। পুলিশের সামনেই ফোন করে অন্য দুর্বৃত্তদের অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ডাকতেও দেখা যায়। এ ঘটনায় পুলিশ হোটেল স্টাফ অমিত ও স্থানীয় দুর্বৃত্ত পারভেজ নামের দুজনকে আটক করলেও ওসি হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন এবং দুজনকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তৌহিদুল আরিফের সামনেই ওসি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকরা থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তারা ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সাংবাদিকরা অভিযোগ তোলেন, ওসি সিদ্দিকুর রহমান হোটেল এক্স থেকে অবৈধ সুবিধা নেন বলে ওই হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। তিনি শুক্রবারের এই ঘটনার পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছেন। তিনি রাজপাড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি থানায় থাকার যোগ্য নন। তিনি যোগ দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেদিনই এই ওসিকে প্রত্যাহার করা উচিত ছিল। কারণ, তিনি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ।

পরে মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এ ছাড়া ওসি সিদ্দিকুর রহমানকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে।’ তার আশ্বাসে সাংবাদিকরা আন্দোলন স্থগিত করেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, সাংবাদিকদের থানা ঘেরাও করার খবর তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থালে পাঠিয়ে সমস্যার সমাধান করেছেন।