- সারাদেশ
- জনস্বাস্থ্যের নলকূপে চাষাবাদ
জনস্বাস্থ্যের নলকূপে চাষাবাদ

আশরাফ আলী একজন কাপড় ব্যবসায়ী। রয়েছে দোতলা বাড়ি। তিনি উপজেলার মুংলি এলাকার বাসিন্দা। তাঁর নামে দেওয়া হয়েছে সরকারি অগভীর নলকূপ (সাবমারসিবল পাম্পসহ)। বাড়ির পাশে সবজিক্ষেতে তা স্থাপন করেছেন।
হলিদাগাছী এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান আলী পেশায় একজন মাছ চাষি। তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক কোটায় জনস্বাস্থ্যের দুটি নলকূপ পেয়েছেন। একটা নিজের নামে নিয়ে পুকুরপাড়ে স্থাপন করেছেন। সেখানে মাছ চাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যটি বাবার নামে নিয়ে বাড়িতে স্থাপন করেছেন।
চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মুরগি খামারি একের আলীর নামেও দেওয়া হয়েছে নলকূপ। তাঁর খামারে নলকূপটি স্থাপন করে মুরগিকে পানি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করছেন।
শুধু এই তিন ব্যক্তিই নন, সরকারি অগভীর নলকূপ নিয়েছেন ধনাঢ্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংকারসহ সচ্ছলেরা। অথচ নীতিমালায় বলা হয়েছে, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় বসবাসকারী এবং আর্থিক ও সামাজিকভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে নলকূপ স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ব্যবসায়ী আশরাফ আলীর দাবি, নলকূপটি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তাঁকে বরাদ্দ দিয়েছেন। বাড়িতে একটা নলকূপ আছে, সেজন্য সরকারিটা দিয়ে কাপড় ধোয়া ও গাছে পানি দেওয়ার কাজ করছেন। শাহজাহান আলী বলেন, বাবার নামের নলকূপ বাড়িতে স্থাপন করেছেন। অন্যটি পুকুরপাড়ে স্থাপন করেছেন। ভবিষ্যতে হয়তো ওখানে বাড়ি করবেন। তাঁর পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করেন, এজন্য বরাদ্দ পেয়েছেন।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মাত্র ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে অগভীর নলকূপ (সাবমারসিবল পাম্পসহ) সরবরাহ করা হচ্ছে। এই নলকূপ স্থাপনে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৯০-৯৫ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে চারঘাট উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ৭৮০টি নলকূপ স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে গত তিন অর্থবছরে ৪৬৮টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নথি যাচাই করে দেখা যায়, উপজেলার ছয় ইউনিয়নে স্থাপন করা ৪৮০টি নলকূপের মধ্যে বেশির ভাগই পেয়েছেন সচ্ছল ব্যক্তি, দলীয় নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী নেতাদের স্বজনরা। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় নলকূপ স্থাপন করা যাবে না। অথচ পৌর এলাকাতেও নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, অন্তত ১০টি পরিবারকে নিরাপদ পানি সরবরাহের আওতায় আনার লক্ষ্যে নলকূপ স্থাপন করতে হবে।
শলুয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের ভাষ্য, শুস্ক মৌসুম এলেই তীব্র পানি সংকটে ভোগেন। কয়েকটি পরিবার মিলে একটি নলকূপের জন্য বারবার আবেদন করেও পাননি। প্রভাবশালীরা বরাদ্দ পেয়ে নিজ বাড়ির ভেতরে স্থাপন করছে। সেখান থেকে আর কেউ পানি নিতে পারছে না।
স্থানীয় সমাজকর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, জনস্বাস্থ্যের নলকূপ বরাদ্দের নামে হরিলুট চলছে। সরকারের উদ্দেশ্য নূ্যনতম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। স্বজনপ্রীতি ও টাকার বিনিময়ে নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিকার হওয়া উচিত।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা জানান, অগভীর নলকূপ মোট বরাদ্দের অর্ধেক দেন সংসদ সদস্য এবং বাকি অর্ধেক দেয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত উপজেলা কমিটি। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে অসহায় তাঁরা।
মন্তব্য করুন