‘বিশ্বাসে হরি মিলে, তর্কে বহুদুর’! নিজেদের পৌরনিক এই চিন্তাভাবনা ও বিশ্বাস থেকেই সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের রায় দৌলতপুরের গোপালপুর গ্রামে
বট-পাকুড়ের বিয়ে সম্পন্ন হলো। ধুতি-টোপড় ও শাখা-সিঁদুর পরিয়ে সনাতন ধর্মালম্বী রীতি অনুসারে মহ-ধুমধামে ওই বিয়ে সম্পন্ন হয়।

পরিবার তথা গ্রামের পার্থিব মঙ্গল কামনায় নিজেদের বিশ্বাস থেকেই শুক্রবার বিকেলে ওই বিয়ের আয়োজন করেন স্বচ্ছল তাঁত মালিক শীতল সরকার। তার সাথে পুরো গ্রামের সনাতনী ধর্মালম্বীরাও ছিলেন। আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন পুরো গ্রামের লোকজনই।

সনাতনী শাস্ত্রের রীতি অনুসারে লগ্ন, তিথি ও মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে বিয়ে শেষে প্রীতিভোজেরও ব্যবস্থা রাখা হয়।আয়োজক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি দুর দুরান্তের আগত দর্শনার্থীরাও সেখানে ভিড় জমান বট-পাকুড়ের বিয়ে উপভোগ করতে।

একযুগ আগে সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি গ্রামের অনুরূপ বট-পাকুড়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে পাকুড়গাছ ‘পুরুষ’ও বটগাছ ‘নারী’সঙ্গী হিসেবে বিবেচিত হয়।

বট-পাকুড়ের বিয়ের আয়োজক তাঁত মালিক শীতল সরকার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন,‘আমার বাড়ির আঙ্গিনায় একটি তাল গাছ রয়েছে। পাশে প্রায় দেড় যুগ আগে সেখানে বট গাছের সাথে পরবর্তীতে একটি পাকুড় গাছেরও জন্ম হয়। পাকুড় গাছ ও বট গাছের পাশাপাশি জন্ম হলে পৌরনিক শাস্ত্র মতে একটিকে পুরুষ, অন্যটিকে নারী বিবেচনা করে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। নানা সমস্যার কারণে আমরা এতদিন সেই বিয়ের আয়োজন করতে পারিনি। সেজন্য আমার পরিবারে ছোটখাট নানা সংকট ও বিপদ প্রায়ই লেগেই থাকতো। বিয়ের আয়োজনে পরিবারের লোকজন ইতিপর্বে একাধিকবার স্বপ্নও দেখেছি। পরিবারের পাশাপাশি গ্রামের সংকট কাটাতে সনাতনী ধর্মালম্বী প্রতিবেশিদের নিয়ে মুলত ওই বিয়ের আয়োজন।’

গোপালপুর গ্রামের অধিবাসি দেবাশীষ মন্ডল মিঠুন বলেন, অনেক দিন ধরেই শুনছিলাম বট-পাকুড়ের বিয়ে হবে। অনেক প্রতীক্ষার পর শুক্রবার বিকেলে পাকুড় গাছের সাথে ধুতি,পাঞ্জাবি ও মুকুট জড়িয়ে এবং বট গাছের সাথে শাড়ি, শাখা,সিঁদুর ও মুকুট পরিয়ে আনুষ্ঠানিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

একই গ্রামের বাসিন্দা আনন্দ মোহন মজুমদার বলেন, ‘বিয়েতে পাকোড় গাছকে বর ও বট গাছকে কনে সাজিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে উপলক্ষে ক’দিন থেকেই আনন্দে ডুবে ছিল গ্রামটি। আলোক সজ্জা আর ঢাক ঢোলের পাশাপাশি সাউন্ড বক্সে নানা ধরনের গান বাজিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অতিথিরা। সন্ধ্যায় বিয়ের আয়োজক শীতল সরকারের বাড়িতে গ্রামের সবাই নৈশভোজেও অংশ নেন'।