'কি করং বাহে। মোর ছাওয়া তিনটার কপালত কি অসুক আসিল। অ্যালা ভাতের যোগার দেং, না অপারেশন করং। জন্ম থাকি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছোয়াল তিনটা। বড় ছোয়াটার অপারেশন করনু মাইনষের সাহায্যে। আরো দুইটা বাকী আছে। অ্যালা ওষুধ কেনং, না ছোয়া পোয়ার মুখত ভাত দেং। ওষুধ কিনলে ওরা না খাইয়্যা থাকে। মুই আর কুলবার পাংনা বাহে'।

থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত চার সন্তানের বাবা হতদরিদ্র দিনমজুর রফিকুল ইসলাম আঞ্চলিক ভাষায় এভাবেই তুলে ধরেন নিজের পরিবারের দুরাবস্থা। রফিকুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের মধ্য রাবাইতারী গ্রামে।

চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হাজরা বেগমের মুখেও। তিনি জানান, তাদের চার ছেলে। প্রথম ছেলে আবু হাসান (২৩), দ্বিতীয় ছেলে আবু হোসেন (২০), তৃতীয় ছেলে হাসু মিয়া (১৬) জন্ম থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। ছোট ছেলে সাজু মিয়া  (১০) সুস্থ আছে। বয়স বাড়লেও চেহারা ও আকৃতিতে রোগে আক্রান্ত তিন ছেলেকেই শিশুর মতো দেখায়।

হাজরা বেগম আরও জানান, অসুস্থ সন্তানদের নিয়ে বহু কষ্টে দিন পার করছেন। যেদিন কাজ জোটে সেদিন সন্তানদের খাবার জোটে। কাজ না জুঁটলে কোন রকমে এক বেলা খেয়েই দিন পার করেন।

তিনি বলেন, জরাজীর্ণ দুইটা ঘরে থাকি। কোনমতে রাত কাটাই সবাই মিলে। কোন আবাদি জমি নেই। মাত্র দেড় শতাংশ জমির বসতভিটাই সম্বল।

জানা যায়, এক মাস আগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট- বাজারসহ মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বড় ছেলে আবু হাসানের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন রফিকুল-হাজরা দম্পতি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এক সপ্তাহ হলো বড় ছেলে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসেছে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মেজ ছেলে আবু হোসেন অসুস্থ শরীর নিয়ে পাশ্ববর্তী বটতলা বাজারে অন্যের দোকানে মাসিক দুই হাজার টাকা বেতনে কাজ করছে। প্রতি মাসে দ্বিতীয় ছেলে আবু হোসেন ও তৃতীয় ছেলে হাসু মিয়ার শরীরে এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে হচ্ছে। চিকিৎসক বলেছেন, অতি দ্রুত সময়ে ওই দুজনেরও অস্ত্রোপচার করা খুবই জরুরি।

হাজরা বেগম জানান, এক দিকে সংসারের ছয় সদস্যর ক্ষুধা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে সন্তানদের চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়েছে। অথচ অভাব অনটন তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় সন্তানরা ধুকে ধুকে মরতে বসলেও টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা। সে কারণে প্রতিমাসে দুই ছেলের রক্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ওই এলাকার বাসিন্দা হোসেন আলী জানান, বিক্রি করার মতো কিছুই নেই ওই পরিবারের। টাকার অভাবে ছেলেদের চিকিৎসা বন্ধের পথে। তার ভাষায়, ওই পরিবারের অসুস্থ সন্তানদের বাঁচাতে সমাজের দানশীল হৃদয়বান ব্যক্তি ও সরকার এগিয়ে আসলে ছেলেগুলো হয়তো অন্যদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।  

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কান্তি সাহা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের শরীরে রক্ত দিতে হয়। নিরাময়  না হলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাহানুল ইসলাম জানান, ওই পরিবার অসুস্থ দুই ছেলের চিকিৎসার জন্য আবেদন করেছেন। তাদের আবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে । বরাদ্দ আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।