ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন কয়েক যুগ আগে। সেখানে শিক্ষকতা করেছেন, সেও বহু বছর আগের কথা। তবে কলেজের নামটা শুনলে এখনও বুকের ভেতর কেমন যেন ছলাৎ করে ওঠে। স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে কত সুমধুর স্মৃতি।

সেই স্মৃতিগুলো একটু ভাগাভাগি করতে মিলেছিলেন এখানকার প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, যাঁরা নিজেদের রাজেন্দ্রিয়ান বলে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করেন। শনিবার সাভারের মধুমতি মডেল টাউনের জিয়ন রিসোর্টে ‘শতবর্ষী রাজেন্দ্র কলেজ: আমার ভালোবাসা’ স্লোগানে এ অনুষ্ঠানে প্রবীণ শিক্ষকদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দিনব্যাপী এ মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করেন।

‘শতবর্ষী রাজেন্দ্র কলেজ: আমার ভালোবাসা’ ভার্চুয়াল পেজ গ্রুপ এ মিলনমেলার আয়োজন করে। শনিবার সকালে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর শিক্ষকদের মঞ্চে বসিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ৭৪ বছর বয়সী সিদ্দিকুর রহমান খান সংবর্ধনা পেয়ে আবেগাপ্লুত। তিনি বলেন, ‘জীবনের এ পড়ন্ত বেলায় এসে সংবর্ধনা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। যে কজন বেঁচে আছি, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আমাদের স্মরণ করছে, এতেই আমরা আনন্দিত। আজ এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে।’

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রাজেন্দ্রিয়ান এ. কে. আজাদ বলেন, আজকের এ মিলনমেলাটি সত্যিই আনন্দের। শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ যেসব প্রবীণ শিক্ষক এখানে সংবর্ধনায় এসেছেন, তাঁদের সবারই যোগ্যতা ছিল বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পাবলিক সার্ভিসে যোগদান করার কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন পেশায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু তাঁরা সেসব পেশায় না গিয়ে শিক্ষকতার মহান পেশাকে বেছে নিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সবাইকে একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমরা জীবদ্দশায় পরিবারের, সমাজের এবং দেশের জন্য কতটুকু অবদান রাখতে পারলাম, সেটাই মূল বিষয়। শিক্ষকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এসব গুণী প্রবীণ শিক্ষকের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য রাজেন্দ্রিয়ানদের মাধ্যমে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের আহ্বান জানান তিনি।

রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা বলেন, শিক্ষার গুণগত মান ও শিক্ষাকে সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়া এবং ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের উন্নতির জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠানের কোনো তুলনা হয় না। এ ধরনের অনুষ্ঠান কলেজ চত্বরে হলে এর মান আরও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য তিনি কলেজের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

ফেসবুক পেজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডমিন ও রাজেন্দ্র কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ড. রানা চৌধুরী বলেন, পেশাগত জীবনে কোনো না কোনো সময় রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষকতা করেছেন এবং যাঁদের বয়স ৭০ বছর, তাঁদের জন্যই এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এবার ৩৭ জন প্রাক্তন শিক্ষককে সংবর্ধনা দেওয়া হলো।

মিলনমেলায় উপস্থিত ছিলেন রাজেন্দ্র কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান ও প্রকাশক আবুল কালাম আজাদ।

আরও উপস্থিত ছিলেন অকোটেপ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুস সোবাহান, রেজাউল হায়দার, প্রকৌশলী শফিকুল হক তালুকদার, নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি কাইমুজ্জামান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মসিউর রহমান প্রমুখ।

মধ্যাহ্নভোজের পর রাজেন্দ্রিয়ানদের অংশগ্রহণে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ সময় নেচে-গেয়ে সুরের তালে তালে মেতে ওঠেন তাঁরা। পরে র‌্যাফেল ড্রর মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী এ মিলনমেলার সমাপ্তি ঘটে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন মাহাবুবুর রহমান সোহেল।