- সারাদেশ
- মোবাইলকাণ্ডে কারাগারে বন্ধ 'আ'লীগ ওয়ার্ড'
মোবাইলকাণ্ডে কারাগারে বন্ধ 'আ'লীগ ওয়ার্ড'

ছবি: ফাইল
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর শেখ রাসেল ওয়ার্ড। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কোনো নেতা কিংবা কর্মী কারাগারে গেলে রাখা হতো এই বিশেষ ওয়ার্ডে। কারাগারে অন্য ওয়ার্ডগুলোতে বন্দিরা গাদাগাদি করে থাকলেও শেখ রাসেল ওয়ার্ডে রাখা হতো নির্দিষ্ট সংখ্যক বন্দি। এ ওয়ার্ডে বন্দি ছিলেন খুনের দায়ে দণ্ডিত আওয়ামী লীগ সমর্থক এক ডজন কয়েদিও। দলীয় কেউ কারাগারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রভাবশালীরা তদবির শুরু করতেন ওয়ার্ডটিতে রাখার জন্য। সেখানে আরাম-আয়েশে থাকতেন হাজতি ও দণ্ডিতরা। সম্প্রতি এই ওয়ার্ড থেকে অবৈধভাবে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও পরে মোবাইল ফোন উদ্ধার হওয়ায় শুরু হয় বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে 'আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড' হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ডটি।
কারাগারে এমনটি এই প্রথম নয়। আগেও বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য 'বিএনপি ওয়ার্ড' এবং জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের জন্য 'শিবির ওয়ার্ড' চালু ছিল। কারা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এসব ওয়ার্ড চালু করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন বলেন, শেখ রাসেল ওয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ওয়ার্ডে বন্দিদের থাকা নিয়ে বেশি তদবির ছিল। কিছু দিন পরপরই বির্তক সৃষ্টি হতো। এ ছাড়া কারাগারে এখন বন্দির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় ওয়ার্ডটি চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই। যারা সেখানে বন্দি ছিলেন, তাঁদের অন্য ওয়ার্ডে ও সেলে নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা বলেন, প্রায়ই ওই ওয়ার্ডের বন্দিরা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তেন। সম্প্রতি অবৈধভাবে মোবাইল ফোন থেকে কারাগারের বাইরে কল করা নিয়ে বিতর্ক উঠলে শেখ রাসেল ওয়ার্ডে তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে মোবাইল ফোন ও কিছু টাকাসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। তার পরই ওয়ার্ডটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বন্ধ হওয়ার আগে শেখ রাসেলে ওয়ার্ডে ছিলেন খুনের মামলায় দণ্ডিত চট্টগ্রাম উত্তর সৈনিক লীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ বখতেয়ার, যুবলীগ ক্যাডার আলমগীর, এরশাদসহ এক ডজন নেতাকর্মী। এখানে ছিলেন রাউজানের যুবলীগ নেতা আজিজ, দণ্ডিত দীপক দত্ত ভোলাসহ অনেকে।
কারাগার থেকে গত ১৫ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে একটি মোবাইল নম্বর থেকে ও ১৬ অক্টোবর অন্য একটি নম্বর থেকে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার দুই ব্যবসায়ীকে ফোন দিয়ে চাঁদা চাওয়ার ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এখানে থাকা বন্দিরা রাতে তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন।
২০১৭ সালে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দির চাপ বেড়ে যায়। পৌনে দুই হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতার কারাগারে তখন বন্দি ছিলেন আট হাজারের বেশি। চাপ সামাল দিতে বিকল্প হিসেবে শেখ রাসেল দ্বিতল ভবনটিকে ওয়ার্ড বানানো হয়। ওই সময় সাধারণ বন্দিরা সেখানে থাকলেও পরে ধীরে ধীরে ওয়ার্ডটি দখল করতে থাকেন আওয়ামী লীগ সমর্থক বন্দিরা।
মন্তব্য করুন