বাউফলে টাকার বিনিময়ে তৃণমূলের কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে কেন্দ্র থেকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন্দ কুদ্দুসুর রহমানকে। তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, শিগগির প্রতিবেদন পাঠাবেন। গত শনিবার উপজেলা বিএনপির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এর তিন দিন আগে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।

একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, গত বছরের ২৫ নভেম্বর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মিয়াকে আহ্বায়ক ও মো. অলিয়ার রহমানকে সদস্য সচিব করে উপজেলা বিএনপি এবং হুমায়ন কবিরকে আহ্বায়ক ও এটিএম মিজানুর রহমানকে সদস্য সচিব করে পৌর কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদারকে করা হয় পৌর কমিটির সদস্য। তাঁর সহধর্মিণী সালমা আলম লিলি হন উপজেলার সদস্য। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। উৎকোচ নিয়ে তৃণমূলের কমিটি দেওয়াসহ অনিয়মের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সে কমিটি বাতিল হয়।

পরে ঢাকার ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বারকে আহ্বায়ক ও আপেল মাহমুদ ফিরোজকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি করে জেলা বিএনপি। তাঁদের বিরুদ্ধেও ১৫টি ইউনিয়ন কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। পদবাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, নিষ্ফ্ক্রিয়দের পদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগে মহাসচিবের কাছে গত ২৩ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় দুই নেতা। তাঁরা হলেন- উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তসলিম তালুক ও আনিচুর রহমান।

অভিযোগে বলা হয়েছে, আব্দুল জব্বার ঢাকার ব্যবসায়ী। সৌদি আরবে শ্রমিকের ভিসা নিয়ে ব্যবসায়ী বনে যান। ২০১৬ সালে দুর্গাপাশা ইউপি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। আপেল মাহমুদও কমিটি বাণিজ্যে জড়িত। কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতার অভিযোগ, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ঢাকায় বসে টাকার বিনিময়ে গোপনে ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও অভিযোগ করা হয়েছে, গত ২১ নভেম্বর কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে ঢাকায় বসবাসরত মো. জসিম উদ্দিন তুহিনকে সভাপতি ও ন্যাপের রাজনীতিতে যুক্ত আতাহার উদ্দিন সিকদারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মাতুব্বর ও সিনিয়র সহসভাপতি মো. নুর হোসেন খাঁনকে করা হয় সদস্য। বাউফলের কমিটিতে ঢাকার মো. ফারুক গাজীকে সভাপতি করা হয়েছে। দাশপাড়ায় সাবেক সভাপতি আব্দুল খালেককে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যানের আত্মীয় ও ঢাকার মো. আলী আজমকে সভাপতি ও দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ফ্ক্রিয় মজিবুরকে করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সামসুল হক হাওলাদারকে বাদ দিয়ে বেল্লাল ব্যাপারীকে সভাপতি করা হয়।

ধুয়িলা বিএনপিতে উপজেলা আহ্বায়কের ভাই মো. নজরুল ইসলামকে সভাপতি করা হয়েছে। তিনি ব্যবসার কাজে ঢাকায় থাকেন। সূর্যমনি বিএনপির সভাপতি মো. মনির ও নাজিরপুরের সভাপতি মো. হেলাল মুন্সি ঢাকায় ব্যবসা করেন। কেশবপুর, নওমালা ও কালিশুরী ইউনিয়নের কমিটি নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে।

যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান অভিযোগ করেন, সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদারকে কোণঠাসা করতে কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক মুহাম্মাদ মুনির হোসেন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি করছেন। উপজেলায় বিএনপির বিভেদের জন্য তিনি দায়ী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মুনির হোসেন বলেন, দলের দুর্দিনে মতভেদ ভুলে রাজপথে লড়তে হবে একত্রে। তিনি তৃণমূল সংগঠিত করেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

কালাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মাতুব্বর বলেন, তিনি দু'বার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নির্যাতিত হয়েছেন, পাঁচটি মামলা রয়েছে। তাঁকে করা হয়েছে ৪৮ নম্বর সদস্য। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তসলিম তালুকদার বলেন, দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করেছেন- এমন নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে অদক্ষ, অসাংগঠিনক ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার বলেন, তৃণমূলকে সংগঠিত করে দলীয় গঠণতন্ত্র মেনে কমিটি করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে দল যে ব্যবস্থা নেবে, তা মেনে নেবেন। সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ফিরোজ বলেন, তৃণমূল দলের প্রাণ, তাঁদের নিয়েই কমিটি হয়েছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, দলের মহাসচিব অভিযোগ আমলে নিয়ে আকন কুদ্দুসুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান জানান, তিনি মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছেন। তথ্য-উপাত্ত কেন্দ্রকে অবহিত করবেন।