সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পিপিআরসির চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘বর্তমান সমাজে বাল্যবিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। বাল্যবিয়ের কারণে আমাদের সমাজের অনেক ক্ষতি হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ে, স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে।’ 

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নেওয়ার অনেক সূচক রয়েছে। শুধু অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেই হবে না। সুষমভাবে এগোতে হবে। দেশের মাতৃমৃত্যুর হার শূন্য, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আর এসবের জন্য আমাদের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই সমাজ থেকে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। কেননা যে কোনো ভালো কাজের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’ 

রংপুরে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল সোমবার পিপিআরসি (পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার) ও ইউএনএফপিএর যৌথ উদ্যোগে নগরীর পর্যটন মোটেলে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে মিডিয়া পার্টনার ছিল দৈনিক সমকাল। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইউএনএফপিএ-এর চিফ অব পপুলেশন প্লানিং অ্যান্ড রিসার্চ এম শহিদুল  ইসলাম, পিপিআরসির সিনিয়র ফেলো মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ ও সমকালের সহকারী সম্পাদক হাসান জাকির।

অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএ-এর চিফ অব পপুলেশন প্লানিং অ্যান্ড রিসার্চ এম শহিদুল  ইসলাম বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। বর্তমান পৃথিবীতে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জনশুমারি মতে, দেশেও পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। বাল্য বিয়েকে শুধু সামাজিক সমস্যা হিসেবে না দেখে অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও যে ঝুঁকি তৈরি করছে এদিকটাও গুরুত্ব দিতে হবে। ইউএনএফপিএ বাল্য বিয়ের সমস্যাটি নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, রংপুরে আয়োজিত এ বৈঠকের  মাধ্যমে বাল্য বিয়ে নিরসনে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াজেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম, পিপিআরসি পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সৈয়দ জিয়া উদ্দিন আহমেদ, রংপুরের পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম, সিভিল সার্জন ডা. শামিম আহম্মেদ, পিপিআরসির জেন্ডার স্পেশালিস্ট মাহবুবা হক, রংপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি, রংপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুব রহমানসহ বিভিন্ন এনজিও সংগঠন প্রধান, স্কুল ও কলেজের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, মসজিদের ইমামসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএ-এর পক্ষ থেকে ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট অফিসার মশিউর রহমান, প্রোগ্রাম অফিসার (অ্যাডোলোসেন্ট অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ) জাওয়াদ আমিন হাসিব উপস্থিত ছিলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, বাল্যবিয়ের যে সব কারণ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দরিদ্রতা, অশিক্ষা, সচেতনতার অভাব, প্রচলিত প্রথা ও কুসংস্কার, সামাজিক অস্থিরতা, যৌন নিপীড়ন, মেয়েশিশুর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তার অভাব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, যৌতুক প্রথা এবং বাল্যবিয়ে রোধ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া। বাল্যবিয়ের কারণে অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ, মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যহানি, তালাক, পতিতাবৃত্তি, অপরিপকস্ফ সন্তান প্রসবসহ নানাবিধ জটিলতার শিকার হচ্ছে।

এতে বলা হয়, দেশে বেশিরভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১২ থেকে ১৮ বয়সের মধ্যে। বিয়ের ১৩ মাসের মধ্যেই ৬৫ শতাংশ মেয়ে সন্তান ধারণ করে। গ্রামের মেয়েদের বেশিরভাগই বিয়ের এক বছরের মধ্যে সন্তান জন্ম দেয়। বাল্যবিয়ের ফলে মেয়েদের অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ এবং অনেকের বাচ্চা প্রসব করতেই মৃত্যু হয়।