- সারাদেশ
- উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে আওয়ামী লীগে চ্যালেঞ্জ
উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে আওয়ামী লীগে চ্যালেঞ্জ
চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ৪ ডিসেম্বর

দীর্ঘদিন পর আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখে এখানে প্রথম জনসভা করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। স্বাভাবিকভাবে তাঁর এই আগমনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। জনসভা সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের তদারকিতে দিনরাত কাজ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা নগরী। কয়েক দিন ধরে চলছে মাইকিং। এক দিন আগেই তৈরি হয়ে যাবে জনসভার মঞ্চ। এই মঞ্চ থেকে চট্টলাবাসীর কাছে ভোট চাইবেন প্রধানমন্ত্রী; দেবেন নানা নির্দেশনা। তবে নির্বাচন সামনে রেখে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে গণসমাবেশ করেছিল বিএনপি। এর ৫৩ দিনের মাথায় জনসভা করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে সরকারি দল হিসেবে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন এবং জনজোয়ার দেখানোও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী কোনো এলাকা সফরে গেলে তাঁর কাছে সেখানকার মানুষের নানা দাবি থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এখানকার চাওয়া-পাওয়া নিয়েও নতুন করে আলোচনা চলছে। যেমন- জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু পারাপারে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
তাই কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট এলাকায় নতুন সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে এ অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু হবে, হচ্ছে বলেও হচ্ছে না বহুল আলোচিত এই সেতু। সেতুটি নিয়ে এখানকার মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। মেট্রোরেল নিয়ে আলোচনা চললেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা চায় তারা। মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও খুবই অভাব রয়েছে এখানে। ফলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি পর্যায়ে স্কুল-কলেজ স্থাপনের দাবিও রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে বিপুল কাজ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে নতুন করে চাওয়ার কিছু নেই। কেউ কেউ বলছেন, আরও কিছু সমস্যা রয়েছে, যেগুলো সরকারপ্রধানের নজরে আনতে হবে।
১০ বছরেরও বেশি সময় পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জনসভা করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনের এক বছর আগে এই জনসভা করতে যাচ্ছেন তিনি। মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পলোগ্রাউন্ড মাঠে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বন্দরনগরীর উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েই চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এরপর একের পর এক বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে, নগরীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল হচ্ছে, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, মিরসরাইয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন করা হয়েছে। এভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে আরও অনেক প্রকল্প।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম সমকালকে বলেন, শুধু নগরী নয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় এসব উন্নয়ন কাজ চলছে। তাতে চেহারা পাল্টে যাচ্ছে চট্টগ্রামের। এখন নতুন করে তাঁর কাছে দাবি জানিয়ে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। এ কারণে পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় কোনো ধরনের দাবি পেশ করা হবে না।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের সমস্যা ও সম্ভাবনা দুটিই প্রধানমন্ত্রী ভালো করেই জানেন। আর জানেন বলেই এখানে একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের মূল সমস্যাগুলো সমাধান করেছেন। তারপরও তিনি নিজে চট্টগ্রামের উন্নয়নে আরও কিছু ঘোষণা দিতে পারেন। এগুলো আমাদের জন্য বোনাস।
কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মোমিন বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেক কিছু করছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নানা অজুহাতে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ বছরের পর ঝুলে আছে। কালুরঘাটের এক লেনের মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু পারাপারে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। তাই কালুরঘাটে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে ১২-১৩ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। আশা করব চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন। এ নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা চাই।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুভাষ বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সমস্যার কথা তুলে ধরার সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ এটি। তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে নগরীতে মেট্রোরেল করা দরকার।
মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরাও। এ বিষয়ে ইস্ট ডেল্টা ইউনির্ভাসিটির উপাচার্য সিকান্দার খান সমকালকে বলেন, শুধু অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিলেই হবে না। শিক্ষার বিষয়টিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
মন্তব্য করুন