- সারাদেশ
- ধুলায় ঢাকা বায়োমেট্রিক যন্ত্র
ধুলায় ঢাকা বায়োমেট্রিক যন্ত্র

বরিশালের উজিরপুরে তিন বছর আগে ১৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত হয়েছিল বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন। বর্তমানে এসব মেশিনের বেশিরভাগই অচল হয়ে পড়েছে। তবে কোনোটিতে আলো জ্বললেও আঙুলের ছাপ নেয় না। এতে কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে।
জানা যায়, সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা কার্যক্রম চালু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় বলা হয়, স্কুলের সরকারি ফান্ড থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি মেশিন কিনবে। সে অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রতিটি বিদ্যালয়ের স্লিপের টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ওই বরাদ্দ থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য মেশিন কিনে স্থাপন করা হয়। ৩০ হাজার টাকা দরে মেশিনগুলোর মোট ব্যয় ৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
সম্প্রতি ইচলাদী, রাখালতলা, খোলনা, বামরাইল, মুণ্ডপাশা, কালবিলা, বিলগাব বাড়ি, মধ্য সাতলা, নাথারকান্দি, জল্লা ও হস্তিশুণ্ড এম ই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বিদ্যালয়ের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন অকেজো। কোথাও ডাটা সেন্টার ও ইন্টারনেট সংযোগ চোখে পড়েনি। ধুলাবালুর আবরণ পড়ে রয়েছে মেশিনগুলোতে।
শিক্ষকরা বলছেন, কীভাবে এগুলো পরিচালনা করা হবে, তা জানেন না তাঁরা। প্রশিক্ষণও নেই।
খোলনা শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার মৃধার ভাষ্য, স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে 'ডেস্কটপ কম্পিউটার' নামে প্রতিষ্ঠানটি বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপন করেছিল। এসব মেশিনের দাম বাজারে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। বদলিসহ নানা হুমকিতে বাধ্য হয়ে নিম্নমানের মেশিন ৩০ হাজার টাকা দিয়ে নিতে হয়েছে, যা এখন অচল হয়ে পড়ে আছে।
কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের দাবি, চোখের সামনে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়েছে; কিন্তু কিছুই বলতে পারেননি। একটি বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন দিয়ে ২৯ হাজার ৩৫০ টাকা করে নিয়ে গেছে। তাও নিম্নমানের। মেশিনগুলো অচল হয়ে পড়ে আছে। সরকারের যুগোপযোগী উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।
ডেস্কটপ কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী আশরাফি মনির দাবি করেন, তিনি অনিয়ম করেননি। এ কাজ তাঁর নয়। তাঁকে শুধু ইনস্টল করে দিতে বলেছিল। তাঁর কোম্পানি তা করে দিয়েছে।
মেশিন কিনতে কোনো শিক্ষককে চাপ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম। তিনি দাবি করেন, শিক্ষকরা স্বেচ্ছায় মেশিনগুলো স্থাপন করেছেন। কীভাবে মেশিনটি পরিচালনা করতে হয়, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রশিক্ষণ নেই। করোনাকালীন সময়ে অনেক মেশিন ব্যবহার করা হয়নি। তাই কিছু নষ্ট হতে পারে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি আ. মজিদ সিকদার বাচ্চু বলেন, 'হাজিরার মেশিন স্থাপনের পর অনেক শিক্ষক আমার কাছে অনিয়মের অভিযোগ দেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলার মাসিক সভায় অবহিত করি। কিন্তু পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে, তবে সরকারের উচিত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
মন্তব্য করুন