আইভী-শামীম-সেলিমের কণ্ঠে ঐক্যের সুর

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, এমপি সেলিম ওসমান ও তাঁর ছোট ভাই এমপি শামীম ওসমান পাশাপাশি বসেছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে। গতকাল শনিবার দুপুরে প্রেস ক্লাব ভবনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে যানজট ও ফুটপাতের অবৈধ দখল নিরসনে ঐক্যের সুর শোনা যায় তাদের কণ্ঠে। 
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, যানজট নিরসন ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব। ট্রাফিক সিটি করপোরেশন বা এমপির ওপর দোষ চাপাতে পারে না। আপনাদের কাছে (ট্রাফিক) চিঠি দেওয়া আছে বৈধ বা অবৈধ স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। একটাও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন করেন তিনি।
মেয়র আইভী বলেন, এসপির আরও দায়িত্ব নিয়ে কথা বলা উচিত। প্রশাসনের এত বড় কর্মকর্তা হয়ে তিনি কীভাবে বলেন হকার উচ্ছেদ করা যাবে না? এসপি এ কথা বললে হকার কীভাবে উঠবে?
আইভী আরও বলেন, আমি যদি জানতে চাই রাইফেল ক্লাবের সামনে অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড কেন থাকবে? পুরো নারায়ণগঞ্জের মানুষ আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা কি সমাধান দিতে পারি। একাধিকবার মিটিং হয়েছে তারপরও ট্রাক কেন দিনের বেলা ঢুকবে শহরে?
আইভী বলেন, হকার সড়কে বসতে পারবে না। এটা আমার বড় দুই ভাইকে  (সেলিম ও শামীম ওসমান) কমিটমেন্ট দিতে হবে। মেয়রদের কথা প্রশাসন শোনে না, এমপিকেই এটা বলতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে একটা সমস্যা ইপিজেড ছুটি হলে রাস্তাটা অকেজো হয়ে যায়। ফুট ওভারব্রিজ হলে সেই রাস্তার সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে। আমি আর আইভী একটা কাগজে সই করে পাঠালেও এটা (সমাধান) হয়ে যাবে। ভালো কাজ আমরা সবাই মিলে করব। পুরো শহর হকারমুক্ত করুন। কবে করবেন জানান। মেয়র আবেদন করলে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট দেবে।
বিআরটিএর অনুমতি ছাড়া কোনো গাড়ি চলতে দেওয়া উচিত না জানিয়ে এ সংসদ সদস্য বলেন, বিআরটিএ প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ির পারমিশন দেবে না। সে ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন ব্যবসায়ীদের আগে মূল্যায়ন করা উচিত। 
সমস্যার সমাধান করতে হলে সবাইকে কাজ করতে হবে জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমার তরফ থেকে কোনো বাধা আসবে না। 
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে সমস্যার শেষ নেই। আজকে আমরা উঠে গেলাম আর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা নয়। আমার ছোট বোন (আইভী) একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। এটা স্বাভাবিক। আমার দায়িত্ব যেটা নয়, সেটার জন্য কেন দোষারোপ করা হবে, আমি সেটা জানতে চাই।
সেলিম ওসমান আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের সমস্যা ময়লা। এই ময়লা কোথায় যাবে। বাধ্য হয়ে লিংক রোডে গিয়েছে। এখন শীতলক্ষ্যার কোণায়, বন্দরে যায়। যতক্ষণ রাস্তা পরিষ্কার  হবে না, ততক্ষণ এ সব সমস্যার সমাধান হবে না।
এমপি সেলিম বলেন, একটা ফুটপাতও দখলে থাকবে না। এটা না থাকলে মাদক, ইভ টিজিংও থাকবে না। এখানে কোনো রাজনীতি থাকবে না। রাজনীতি একটাই, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে শান্তিতে চলাচল করতে দিতে হবে। আমরা মেয়রকে অবশ্যই সহযোগিতা করব। আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা নারায়ণগঞ্জে কোনো সমস্যা রাখব না। মেয়র আইভী ও আমার ছোট ভাই শামীম ওসমানকে নিয়ে এটা করব। শামীমকে আমরা শক্তি হিসেবে কাজে লাগাব।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে শামীম ওসমানের সমর্থকরা আইভীর ওপর হামলা চালায়। সংঘর্ষে আইভীসহ অর্ধশত লোক আহত হয়। আগে থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে থাকা আইভী ও শামীমের মধ্যে এ ঘটনার পর দূরত্ব আরও বেড়ে যায়। তবে গতকালের বৈঠকে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ডা. আইভী, শামীম ও সেলিম ওসমান ঐকমত্যে পৌঁছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক তাদের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আগামীকাল থেকেই যানজটমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা হবে।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দন শীল, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী শামসুল হকসহ ব্যবসায়ী ও  পরিবহন সেক্টরের নেতৃবৃন্দ।