মদনে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের মধ্যে নিম্নমানের চাল বিতরণ করা হচ্ছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চালভর্তি ট্রাক নিয়ে উধাও ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা আবু সালেক। গত মঙ্গলবার রাতের এ ঘটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় মদন উপজেলায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৮৮। এর বিপরীতে আটটি ইউনিয়নে ডিলার রয়েছেন ১৬ জন। একজন সুবিধাভোগী প্রতি মাসে ১৫ টাকা কেজি ধরে ৩০ কেজি চাল পাবেন। প্রতি ৩০ কেজি চালের বস্তায় তিন কেজি পুষ্টি উপকরণ (বিশেষ পাউডার) মিশ্রিত থাকার নিয়ম রয়েছে। চালের বস্তায় পুষ্টি জাতীয় উপকরণ মিশ্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় নেত্রকোনার এ আর খান পাঠান অটোরাইস মিল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে।
অভিযোগ উঠেছে, এ আর খান পাঠান অটোরাইস মিল মদন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা আবু সালেকের যোগসাজশে নিম্নমানের চাল (পোকামিশ্রিত) ডিলারদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

এর সঙ্গে ৩০ কেজি চালের বস্তায় কোনো রকম পুষ্টি উপকরণ মিশ্রণ করা হয়নি। পুষ্টি মিশ্রণ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে সুবিধাভোগীদের মধ্যে চাল বিক্রি করছেন ডিলাররা। গত মঙ্গলবার বিকেলেও কাইটাইল ইউনিয়নের বাড়রী গ্রামের ডিলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ছদ্দু মিয়ার গুদামে ৩৫৭ সুবিধাভোগীর চাল পাঠানো হয়। পোকাযুক্ত চালে পুষ্টি উপকরণ না থাকায় বিষয়টির প্রতিবাদ জানান ডিলার ও সুবিধাভোগীরা। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে বাড়রী গ্রামের ডিলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ছদ্দু মিয়ার গুদামে খোঁজ নেয় সমকাল। সেখানে দেখা গেছে, তাড়াহুড়ো করে ডিলারের গুদাম থেকে নিম্নমানের চাল লোকজন নিয়ে ট্রাকে বোঝাই করছেন মদন ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা আবু সালেক। বিষয়টি তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিনা শাহরীনকে জানানো হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। কিছুক্ষণ পর চালভর্তি ট্রাক নিয়ে উধাও হয়ে যান খাদ্য কর্মকর্তা আবু সালেক।

ডিলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ছদ্দু মিয়া বলেন, 'পুষ্টিমিশ্রিত না করে আমার গুদামে পোকাযুক্ত চাল পাঠানো হয়। এরপর রাতে খাদ্য কর্মকর্তা ট্রাকে করে চালের বস্তাগুলো নিয়ে গেছেন।'

এ আর খান পাঠান অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী এইচ আর খান পাঠান সাকির দাবি, মদনে চাল পাঠানো হয়েছে কিনা জানা নেই তাঁর। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

নিম্নমানের চালের বিষয়টি নিশ্চিত করে মদন ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, 'পুষ্টি মিশ্রণের জন্য আমরা গোডাউন (গুদাম) থেকে ভালো মানের চাল নেত্রকোনা এ আর খান পাঠান অটোরাইস মিলে পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনো রকম পুষ্টি না মিশিয়ে নিম্নমানের চাল ডিলারের কাছে পাঠানো হয়েছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিনা শাহরীন জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নিম্নমানের চালের বিষয়টি শুনেছেন। এ বিষয়ে খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে।