
ফাইল ছবি
হারিয়ে যেতে বসেছে সিলেটের গোলাপগঞ্জের মৃৎশিল্প। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে আলোচনার বাইরে চলে যাচ্ছে বাংলার এই ঐতিহ্য।
মাত্র কয়েক বছর আগেও মৃৎশিল্পীদের তৈরি মাটির তৈজসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল দেশ-বিদেশে। সেই চাহিদা পূরণ করতে রাতদিন পরিশ্রম করতে হতো মৃৎশিল্পীদের। সাম্প্রতিক অবস্থায় তাঁদের মাথায় হাত। বেকার হতে বসেছে এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশাল এক জনগোষ্ঠী।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার পৌরসভাধীন কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীরা এখন অনেকটাই অলস সময় পার করছেন। যুগ যুগ ধরে তাঁদের পূর্বপুরুষ যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, কালের আবর্তে তা আজ মৃতপ্রায়। পূর্বপুরুষের পেশা পরিবর্তন করে তাঁরা অন্য পেশার আশ্রয় নিচ্ছেন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে। হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার ছাড়া কোনো বাড়িতেই এখন মাটির তৈজসপত্র দেখা যায় না। কুমারবাড়ির সেই চাকাও ঘুরে না।
কুমারপাড়ার বাসিন্দা বিশ্ব পাল জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে এই পেশায় নিয়োজিত। ছোটবেলায় দেখেছেন এই পেশার রমরমা ব্যবসা। ব্যাপক চাহিদা ছিল এসব পণ্যের। পার্শ্ববর্তী বিল থেকে মাটি সংগ্রহ করে সেই মাটি দিয়ে তাঁরা তৈরি করতেন নানা পণ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শৌখিন খেলনা বা ঘর সাজানোর উপকরণ- সবই ছিল তার মধ্যে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন এলাকায়। দেশের বাইরেও এসব পণ্যের চাহিদা ছিল। এখন আর সে রকম ব্যবসা নেই। বড় কোনো অর্ডারও আসে না।
পুতুল পাল, পরেশ পাল, রসেন্দ্র পালসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন মৃৎশিল্পী জানান, তাঁরা এখন জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় থাকলে না খেয়ে মরবে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ভালো কথা, সেটা তাঁরাও চান। তবে তাঁদের প্রত্যাশা বাংলার এই ঐতিহ্যও যেন টিকে থাকে সেই সঙ্গে। এই শিল্প যাতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে চিরতরে বিলীন হয়ে না যায়। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা রক্ষা পেতে পারে এ শিল্প।
মন্তব্য করুন