খুলনা মহানগরীর ৬৯টি সড়ক ও ৮৩টি ড্রেন সংস্কারের কাজ করছে সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। নগরীর অধিকাংশ সড়ক খুঁড়ে স্যুয়ারেজ লাইন বসাচ্ছে ওয়াসা। ইতোমধ্যে পাইপ বসানোর জন্য ৯টি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। নগরীজুড়ে দুই সংস্থার এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নাগরিকরা। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা থাকলেও লাগবে কয়েক মাস।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর আহসান আহমেদ সড়ক খুঁড়ে ওয়াসার স্যুয়ারেজ পাইপ বসানোর পর কোনোমতে মাটি দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে। শামসুর রহমান সড়ক খুঁড়ে বসানো হচ্ছে স্যুয়ারেজ লাইন। খানজাহান আলী সড়কের এক পাশের ড্রেন পুনর্নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করছে কেসিসি। বেনী বাবু সড়ক খোঁড়ার পর দীর্ঘদিন ইটের খোয়া বিছিয়ে রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই চারটি সড়ক আরও ভোগান্তি বয়ে এনেছে। উন্নয়ন কাজের জন্য অনেক সড়ক বন্ধ থাকায় নগরবাসীকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে অনেক ঘুরে। এতে বিকল্প সড়কগুলোতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এ ছাড়া ধুলাবালিতে পথচলাই দায়। কেসিসি ও ওয়াসা বলছে, উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে এই দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে আরও বেশ কয়েক মাস।

খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, এডিবির আর্থিক সহযোগিতায় 'খুলনা পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন' প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে ওয়াসা। প্রকল্প ব্যয় ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় নগরীর বাড়িগুলো থেকে মানববর্জ্য পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে পরিশোধন করা হবে। প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজের প্রথম ধাপে সড়ক খুঁড়ে বসানো হচ্ছে ১০ ইঞ্চি থেকে ৪০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন।

গত ২২ জুন শুরু হয় সড়ক খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ। ইতোমধ্যে নগরীর শেখপাড়ার হাজী ইসমাইল রোড, ছোট মির্জাপুর ও বড় মির্জাপুর রোড, আহসান আহমেদ রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, টি বি ক্রস রোড ও ফায়ার ব্রিগেড রোড খুঁড়ে স্যুয়ারেজ পাইপ বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, এই ছয়টি সড়কে পাইপ বসানোর পর মাটি দিয়ে এবড়োখেবড়ো গর্ত ভরাট করা হয়েছে। গর্তগুলো সমান করা হয়নি। এতে সড়কগুলোতে ছোট-বড় যানবাহন চলছে হেলেদুলে। এ ছাড়া ব্যাপক হারে ধুলাবালি উড়ছে। চলাচলে দুর্ভোগের পাশাপাশি অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

বর্তমানে ট্যাংক রোড, শামসুর রহমান রোড ও টুটপাড়া ইস্ট লিংক রোড খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ হচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নগরীর ২৬৯ কিলোমিটার সড়ক খুঁড়ে এই পাইপ বসানো হবে।

খানজাহান আলী রোডে দেখা যায়, শান্তিধাম মোড় থেকে ফেরিঘাট মোড় পর্যন্ত সড়কের ডান পাশের ড্রেন খোঁড়া হচ্ছে। ড্রেনের মাটি ও পার্শ্ব দেয়ালের ইটগুলো সড়কের এক-তৃতীয়াংশ জায়গাজুড়ে রাখা হয়েছে। এতে ব্যস্ততম এই সড়কে প্রায়ই যানজট লেগে থাকছে। ব্যস্ততম টুটপাড়া-জোড়াকল বাজার সড়কেরও একই চিত্র। বেনী বাবু সড়কে দেখা যায়, সড়কটিতে ইটের খোয়া বিছানো। কবে নাগাদ পিচ দেওয়া হবে, তা জানেন না এলাকাবাসী। নগরীর পিটিআই মোড়, ফারাজিপাড়া ফুল মার্কেট, ছোট মির্জাপুর মোড়, স্যার ইকবাল রোডসহ আরও কয়েকটি স্থানে দেখা যায় ব্যাপক যানজট।

এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মো. বাবুল হাওলাদার সমকালকে বলেন, একই সঙ্গে দুই সংস্থা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, সড়ক ও ড্রেন সংস্কার কাজ শুরু করায় নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। প্রকল্পটি নগরবাসীর সুবিধার জন্যই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সাময়িক দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে। কেসিসি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়ক সংস্কার কাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে। নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন তিনি।