ভৈরব নদের তীরে ১৯০৬ সালে নির্মাণ করা হয় খুলনা জেলা কারাগার। ৬০৮ জন ধারণক্ষমতার জরাজীর্ণ এ কারাগারে চলতি মাসে বন্দি রয়েছেন ১ হাজার ২০০ জনের মতো। মাঝে মাঝে বন্দি তিন গুণ ছাড়িয়ে যায়। এ অবস্থায় ২০০৮ সালে নতুন জেলা কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কারা অধিদপ্তর। কিন্তু দফায় দফায় ব্যয় বাড়লেও এ কারাগারের নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না।
দুই হাজার বন্দি ধারণক্ষমতার 'খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ' প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১১ সালে। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য ছিল ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা। কিন্তু স্থান পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতাসহ নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকায়। এবার লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এবারও লক্ষ্য অর্জন হয়নি। এর পর তিন দফায় তিন বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গত মে মাসে প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে হয় ২৮৮ কোটি টাকা। কাজ শেষ করার নতুন সময় ২০২৩ সালের ৩০ জুন।

সরেজমিন দেখা যায়, ভবনগুলোর অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও কারাগারে চার তলা হাসপাতাল ভবন, দুই তলা স্কুল ভবন, পয়ঃবর্জ্য শোধনাগারের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ওয়াকওয়ে, অভ্যন্তরীণ সড়ক ও ড্রেনের কাজ এখনও শুরু হয়নি। বিভিন্ন ভবনের রংসহ ফিনিশিংয়ের সব কাজই বাকি রয়েছে। তবে গণপূর্ত বিভাগ বলছে, যে কোনোভাবে তারা আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে চান। কাজ দ্রুত এগোচ্ছে।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদে এ কারাগারে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চার হাজার বন্দি রাখা যাবে। তবে প্রকল্পের আওতায় আপাতত দুই হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে।

কারাগার এলাকার ভেতরে বিভিন্ন শ্রেণির বন্দি ব্যারাক, কারারক্ষী কোয়ার্টারসহ এক তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত ৪৭টি ভবন নির্মাণ হচ্ছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ কংক্রিটের অবকাঠামো রয়েছে ৫২টি। বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক প্রাচীর রয়েছে। কারাগারের ভেতরে ১৮ ফুট, ১২ ফুট, ৪ ফুটসহ বিভিন্ন উচ্চতার প্রাচীরই নির্মাণ হচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। গণপূর্ত বিভাগের দাবি, গত নভেম্বর পর্যন্ত নির্মাণকাজের ভৌত অগ্রগতি ছিল ৮৫ শতাংশ।

প্রকল্প অফিস থেকে জানা যায়, নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড থাকবে। একই ভাবে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মোক্তার আহমেদ সমকালকে বলেন, ১১ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় তাঁরা বিব্রত। সংশ্নিষ্টদের দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প ২০১১ সালে পাস হলেও মূল অবকাঠামোর কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। এর মধ্যে করোনার কারণে দুই বছর কাজ বন্ধ ছিল। তবে এখন দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। ভবনের কাজ সব শেষ। হাসপাতাল, স্কুল, সড়ক, ড্রেনসহ অন্যান্য কাজও নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে।




বিষয় : খুলনায় নতুন জেলা কারাগার

মন্তব্য করুন