আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজলের বিরুদ্ধে রেলওয়ের কয়েক কোটি টাকার জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার রেলমন্ত্রী আখাউড়ায় আসেন। তিনি লিজের ব্যাপারে কাজলের আবেদন সরাসরি নাকচ করে দেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সম্পত্তিটি জনৈক আইনজীবীর কাছ থেকে উদ্ধার করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, লালবাজার এলাকায় দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের উল্টোদিকে 'সাত্তার-জাহানার প্রতিপালন কেন্দ্র' নামে একটি সাইনবোর্ড টানানো। নিচে লেখা 'সার্বিক তত্ত্‌্বাবধানে তাকজিল খলিফা কাজল'। তবে কোনো পদবি ব্যবহার করা হয়নি। কিংবা এটি পৌরসভার অধীনে কিনা, তা-ও উল্লেখ নেই। পাশে রেলওয়ের আরেকটি জায়গায় 'পৌরসভার প্রস্তাবিত গ্যারেজ' লেখা সাইনবোর্ড। 'আশারানী দেব বিদ্যাপীঠ' নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডও টানানো হয়েছে জায়গাটির একাংশে। সব মিলিয়ে রেলওয়ের ৫০-৬০ শতাংশ জায়গা ওই আওয়ামী লীগ নেতার দখলে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিপালন কেন্দ্রে মূলত সপ্তাহে তিন দিন অসহায়দের খাওয়ানো হয়। মেয়র কাজলের ব্যক্তিগত টাকায় বিরিয়ানি খাওয়ানো হয় অসহায়-দুস্থদের। এ জন্য রেলওয়ের একটি ভবনও দখলে রেখেছেন তিনি। কেন্দ্রটি মেয়রের প্রয়াত মা-বাবার নামে। ওই জায়গা নিয়ে রেলওয়ের সঙ্গে এক আইনজীবীর দ্বন্দ্ব ছিল। সম্প্রতি জায়গাটি উদ্ধার করে রেলওয়ে। এর পরই সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্যারেজের নামে পৌরসভার সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর কৌশলে মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝোলান কাজল।

পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী ফয়ছাল আহম্মেদের নেতৃত্বে একদল যুবক রেলওয়ের বেড়া ভেঙে দখল প্রক্রিয়ার কাজটি শুরু করেন। জায়গাটির দাম ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা হবে।

গত রোববার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন আখাউড়া পরিদর্শনে এলে দেখা করতে যান প্রভাবশালী কাজল। রেলওয়ে স্টেশনে তিনি যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নিয়ে মন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের এক পর্যায়ে জায়গাটি বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য রেলমন্ত্রীর হাতে আবেদনের কাগজ তুলে দেন।

এ সময় মন্ত্রী জানান, আখাউড়ার চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য রেলওয়ের অনেক জায়গা প্রয়োজন। এ অবস্থায় জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। মন্ত্রী অনেকটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বলেন, প্রয়োজনে মামলায় আপিল করবে রেলওয়ে। আমি কি বাঘের কাছ থেকে জায়গা এনে কুমিরের কাছে দিয়ে দেব? রেলওয়ের সম্পত্তি লিজের নামে দখল করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অভিযুক্ত কাজল জানান, সম্পত্তিটি তিনি পৌরসভার নামে লিজ নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। লিজ নিয়ে নিজ তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করবেন।