
আদমদীঘির ছাতিয়ানগ্রামের বাগবাড়ি মাঠ এলাকায় ফসলি জমি থেকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে মাটি। শনিবার তোলা - সমকাল
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের কুমারপুর গ্রামে বাড়ি নূর মোহাম্মদের। ১১ শতক জমির মাটি তিনি সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই মাটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে কেটে লরি বোঝাই করে নেওয়া হচ্ছে অন্য স্থানে। তবে বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ নূর মোহাম্মদ। তাঁর দাবি, জমিটি উঁচু জায়গায় হওয়ায় পানি থাকে না। যে কারণে ফসলের আবাদ তেমন হয় না। বাধ্য হয়ে মাটি কেটে জমি নিচু করছেন।
এমন নানা ছুতায় উপজেলার ফসলি জমির মাটি কাটা চলছে। অথচ বগুড়া জেলার শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত আদমদীঘি উপজেলা। ছয় ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা (সান্তাহার) মিলিয়ে এখানে ফসলি জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৪৫০ হেক্টর। তিন ফসলি এসব জমিতে চাষ হয় রোপা আমন, বোরো ধান, রবিশস্যসহ মৌসুমি ফসল। আমন মৌসুমে ৩৬ হাজার ৫৪২ টন ধান উৎপাদিত হয় উপজেলায়। এ ছাড়া ইরি-বোরো মৌসুমে এ পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তখন ৫৪ হাজার টন ধান উৎপাদন হয়, যা উপজেলার চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ হয়।
এসব আবাদি জমিতে নজর পড়েছে অসাধু মাটি ব্যবসায়ীদের। গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে উৎসাহিত করছে পুকুর খননে। এসব কারণে এ উপজেলায় দিন দিন ফসলি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। ফলে আগামীতে উপজেলায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে সংশ্নিষ্টরা সতর্ক করে দিয়েছেন।
সরেজমিন আদমদীঘি সদরসহ কুন্দগ্রাম, নসরতপুর, ছাতিয়ানগ্রাম, কোমারপুর, চাঁপাপুর, সান্তাহার, তারাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাটি কাটার চিত্র চোখে পড়ে। বেশিরভাগ জায়গায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটছে ব্যবসায়ীরা।
শনিবার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের অন্তাহার গ্রামে গিয়ে মন্টু শেখের ১৮ শতক জমিতে পুকুর খনন করতে দেখা যায়। তাঁর ভাষ্য, জমিতে ফলন আশানুরূপ পাচ্ছেন না। যে কারণে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করছেন।
অনেকে আবার পুরোনো পুকুর সংস্কারের ছুতায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে নিজ জমির মাটি কাটছেন। গভীর করে মাটি কাটার ফলে আশপাশের অন্য মালিকদের জমিও ভাঙনের কবলে পড়ছে।
আদমদীঘি সদর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের আব্দুল করিম মাটির ব্যবসায় জড়িত। তিনি বলেন, জমির মালিকদের কাছ থেকে মাটি কেনেন। পরে ভাড়া করে আনা এক্সক্যাভেটর দিয়ে কাটিয়ে বিক্রি করেন। ইটভাটার মালিকরাও মাটি কেনে। যারা বসতবাড়ি করতে চায়, তাদের কাছেও বিক্রি করেন।
নসরতপুর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ আবাদি জমিতে মাটি ভরাট করে উঁচু করছেন। আইনে আবাদি জমি নষ্ট করে মাটি ভরাটের বিষয়টি জানেন না লতিফ। তিনি বলেন, ভরাটের জন্য অন্য জায়গা থেকে মাটি কিনেছেন। ভবিষ্যতে মাটি ভরাট করার প্রয়োজন হলে প্রশাসনের কাছে আবেদন করবেন।
দীর্ঘদিন ধরেই এ অবস্থা দেখে আসছেন বলে জানান ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক আবু। তিনি বলেন, বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তুলেছেন। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম ফারুক আঙ্গুর বলেন, আবাদি জমি প্রতিনিয়ত কমছে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই। তা না হলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিঠু চন্দ্র অধিকারী বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর খনন করা যাবে না। এ ব্যাপারে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
আদমদীঘির ইউএনও টুকটুক তালুকদার বলেন, কৃষিজমিতে পুকুর খনন বা মাটি ভরাট অবৈধ। কেউ যদি আইনবহির্ভূতভাবে তা করেন, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন