- সারাদেশ
- জীবন পথের প্রদীপের আলো
জীবন পথের প্রদীপের আলো

পাবনার সাঁথিয়ায় জীবন পথের প্রদীপ পাঠাগারে বই পড়ছেন পাঠকরা সমকাল
ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার মানুষকে অজানা এক জগতে নিয়ে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমগুলো মানুষকে ধীরে ধীরে পরিবার, স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। নতুন প্রজন্ম হারাচ্ছে ধৈর্যশীলতা, সহনশীলতা ও বোধ-বুদ্ধি। মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের করে তুলছে অলস, সহিংস, হতাশাগ্রস্ত। সমাজের মানুষকে বিশেষত তরুণদের এই পথ থেকে ফেরাতে পাবনার সাঁথিয়ার নন্দনপুর বাজারে রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে 'জীবন পথের প্রদীপ' পাঠাগার। ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই পাঠাগার।
২০১৭ সালে নন্দনপুর বাজারে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে প্রায় দুইশ বই দিয়ে পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে পাঠাগারে প্রায় আড়াই হাজার বই রয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টায় পাঠাগারটি খোলার পর সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চালু থাকে। আবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঠকদের জন্য এটি উন্মুক্ত থাকে। সরেজমিন দেখা যায়, পাঠাগারটিতে উপন্যাস, ছোট গল্প, নাটক, ইতিহাস, বিজ্ঞান, প্রাচীন ও মধ্যযুগের কবি-সাহিত্যিকদের রচনা, মনীষীদের জীবনী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, একাডেমিক বইসহ দৈনিক, ত্রৈমাসিক ও চাকরির পত্রিকা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন পাঠক লাইব্রেরিতে এসে বই পড়েন। কেউ কেউ এক সপ্তাহের জন্য বাড়িতে বই নিয়ে পড়ে সেগুলো জমা দেন।
নন্দনপুর বাজারের ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, রাজিব, বশির বলেন, আমরা কাজের ফাঁকে সময় পেলে পাঠাগারে এসে বই ও পত্রিকা পড়ে অনেক কিছু শিখছি ও জ্ঞানার্জন করছি। নন্দনপুর ডিজিটাল কিন্ডারগার্টেনের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতুল জানায়, বাইরে আড্ডা দিয়ে বা সময় নষ্ট না করে অবসরে পাঠাগারে এসে বই পড়ে সে। এ ছাড়া পাঠাগার থেকে নিয়মিত বই বাড়িতে নিয়েও পড়া যায়। পাঠাগারটি থাকায় অনেকেই বই পড়তে উৎসাহিত হচ্ছে।
সাঁথিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক হাফিজুল কবির বলেন, জীবন পথের প্রদীপ পাঠাগার নির্মাণ একটি ভালো উদ্যোগ। পাঠাগারে বই পড়া শিক্ষার পাশাপাশি একটি বিনোদনও বটে। অযথা বাইরে সময় নষ্ট না করে পাঠাগারে এসে বই পড়লে যুবসমাজসহ সবাই অপরাধ ও মাদক থেকে দূরে থাকবে এবং এটা সমাজের ওপর ভালো প্রভাব ফেলবে।
পাঠাগারের উপদেষ্টা শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শেখ আল মাসুদ শিপন বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে প্রয়োজন সুশিক্ষা। আর পাঠাগার হচ্ছে সুশিক্ষা বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে সবাই ইচ্ছামতো জ্ঞান অর্জন করতে পারে। একটি তথ্যনির্ভর ও আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্মকে বই পড়ায় সম্পৃক্ত করতে পারলে সমাজ পরিবর্তন করা সহজেই সম্ভব। জীবন পথের প্রদীপ পাঠাগারটি এই অঞ্চলে সে কাজটিই করে যাচ্ছে এবং জনগণের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে।
পাঠাগারের উদ্যোক্তা বগুড়া জেলা কারাগারের কারারক্ষী নাসিরুজ্জামান রাজু বলেন, রাতের অন্ধকারে পথচলার জন্য যেমন আলো প্রয়োজন, তেমনি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে সরল ও সঠিক পথে পরিচালনার জন্য সুশিক্ষার আলো প্রয়োজন। আর সেই মাধ্যম হচ্ছে পাঠাগার। এ জন্য আমি পাঠাগারটির নাম দিয়েছি জীবন পথের প্রদীপ পাঠাগার। এক সময় একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি গল্পের বই পড়ে অথবা খেলাধূলা করে সময় কাটত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। এখন সে জায়গা দখল করেছে স্মার্টফোন। ফেসবুক, ইন্টারনেট, ইউটিউব নিয়েই পড়ে আছে সবাই। নতুন প্রজন্মকে এই পথ থেকে ফেরানোর একটাই উপায়- বই পড়ানো।
মন্তব্য করুন